প্রতিবাদী কন্ঠ ডেক্স : বিয়ে না করে এক যুবতীর সাথে বসবাস করার খবরে স্থানীয় যুবক, পৌড়াসহ বিক্ষুদ্ধ জনতার হাতে গণপিটুনির শিকার হয়েছেন মোঃ আব্দুল হাফিজ। গত মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিকে শহরের পিটিআই রোডস্থ খন্দকার আতিয়ার রহমানের তিন তলা বাড়ীতে এ ঘটনা ঘটে। প্রকাশ্যে এমন অসামাজিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সোচ্চার বিক্ষুদ্ধ জনতা প্রথমে ওই বাড়ীতে গেলে লুকিয়ে থাকা হাফিজ বাথরুমের ফলস ছাদে বস্তার মধ্যে আশ্রয় নেয়। পরে সেখান থেকে থেকে তাকে টেনে-হিচড়ে বের করে আনে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তাকে কুষ্টিয়া হাসপাতালে নিয়ে যায়।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়, দৌলতপুর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের বসবাসরত খয়বর আলী ও মোছাঃ শাহনাজ পারভিনের পুত্র মোঃ আব্দুল হাফিজ। জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ ২১ ডিসেম্বর ১৯৯১। জাতীয় পরিচয় পত্রে তার প্রকৃত নাম, পরিচয় গোপন করে মোঃ আব্দুল হাফিজ, কুষ্টিয়া শহরে হয়ে যান শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ। ২০২০ সালের ২২ ডিসেম্বর সম্মেলন ছাড়াই আতিকুর রহমান ওরফে অনিককে সভাপতি ও মোঃ আব্দুল হাফিজকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এক বছর মেয়াদি কমিটি ১৭ মাস পর চলতি বছরের ১ জুন পূর্ণাঙ্গ হয়। কমিটি গঠনের সময় বিধি অনুযায়ী প্রত্যোকের পরিচয় পত্র প্রদান করতে হয়। পরিচয় পত্র অনুযায়ী মোঃ আব্দুল হাফিজ কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, কথিত শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ, ছাত্রলীগের মত একটি ঐতিহ্যবাহী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। জাতীয় পরিচয় পত্রের ছবি, তথ্যের সাথে অনেক অমিলও রয়েছে। এ বিষয়টি জেলা ছাত্রলীগ, আওয়ামীলীগের একাধিক নেতৃবৃন্দ অত্যান্ত সন্দেহের চোখে দেখলেও তাকে সণাক্ত করা যায়নি। কেননা একজন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এমন বেসামাল হতে পারে না। জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুল হাফিজ’র পদ-পদবী ব্যবহার করে, দাড়িওয়ালা শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ মাত্র দুই বছরের মাথায় অর্ধকোটি টাকার বাড়ী, গাড়ীসহ অঢেল সম্পদের মালিক বনেছেন। চাল-চলনে বেপরোয়াভাব দেখে অনেক ত্যাগী আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতা কর্মিরা হতাশ হতেন।
এদিকে নারী নেত্রী নওরিন শহরের প্রীতম হোটেলে এক কূ-প্রস্তাব, শ্লীলতাহানি চেষ্টা ও হত্যার হুমকির অভিযোগ এনে ১৯ সেপ্টেম্বর দুপুরে কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ ও ছাত্রলীগ নেতা ফারদিন সৃষ্টি, মোহাইমিনুল মিরাজ এবং মো. হৃদয় মোট ৪ জনের নাম উল্লেখ করে কুষ্টিয়া মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ছাত্রলীগের মধ্যে অনেক মেয়েকে নানা ভাবে উত্যক্ত করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। একটি সুত্র জানিয়েছে, করোনার মধ্যে এই শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ সাধারণ রোগী ও অভিভাবকদের জিম্মি করে অক্সিজেন, ওষুধের ব্যবসা করেছেন। অনেক রোগীর অভিভাবককে অপমান করেছেন। সাধারণ চিকিৎসক, নার্সদের সাথে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। চ্যালেঞ্জের চ্যালেঞ্জির কারণে অনেক করোনা আক্রান্ত রোগীও মৃত্ব্য মুখে পতিত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এসব অভিযোগ আসার পর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপিসহ নেতৃবৃন্দ কুষ্টিয়া ২৫০ শর্য্যার হাসপাতাল থেকে ছাত্রলীগের টিমটিকে তুলে নেয়ার নির্দেশ দেয়। সুত্রটি আরও জানায়, শুধু তাই নয় যে ছেলে কোন দিন স্কুলে যায়নি তাকেও ছাত্রলীগ বানিয়ে চ্যালেঞ্জ হাসপাতালে টি শার্ট পরিয়ে করোনা আক্রান্ত রোগীদের স্বেচ্ছাসেবী বানিয়েছে। অসহায় ওই সকল যুবককে চতুর চ্যালেঞ্জ চাকুরী, ব্যবসা দেয়ার কথা বলে মোটা অংকের টাকাও হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সুত্রটি বলছে, তা হলে কি নারী নেত্রী নওরীনের অভিযোগই কি সত্য হলো। দীর্ঘদিন থেকে পিটিআই রোডে খন্দকার আতাউর রহমানের বাড়ীতে তিন তলায় একটি ফ্ল্যাটে একটি অবিবাহিত মেয়েকে নিয়ে সে দীর্ঘদিন এক সাথে বসবাস করে আসছে। এমন খবরে স্থানীয় যুবক, পৌড়াসহ জনতা প্রথমে ওই বাড়ীর নিচ তলায় অবস্থান নেয়। বাড়ীর সামনে থেকে ডাকাডাকি করতে থাকে। তাতে কোন সাড়া না আসলে জনতা বাড়ীর কলাপসিবল গেট ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে। সিড়ি বেয়ে বিক্ষুদ্ধ জনতা যখন উপরে উঠে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে চতুর শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ ঘরের মধ্যে বাথরুমের ফলস ছাদে আশ্রয় নেয়। জনতা ফলস ছাদ থেকে শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জকে টেনে হিচড়ে বের করে নিয়ে আসে। সেখানে হাফিজ গণপিটুনির শিকার হয়। খবর পেয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এএসআই) জাহাঙ্গির হোসেনসহ সঙ্গীয় ফোর্স তাকে কুষ্টিয়া ২শ ৫০ শর্য্যার হাসপাতালে জরুরী বিভাগে নেয় পুলিশ। চিকিৎসকেরা তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু জরুরী বিভাগে আধা ঘণ্টা থাকার পর হাফিজ তাঁর অনুসারী নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বাইরে চলে যান। হাফিজের অভিযোগ, ছাত্রলীগের কর্মীরা তাঁকে লাঠিসোঁটা দিয়ে পিটিয়েছে। তিনি ঘটনার বিচার চান।
অন্য আরেক সুত্র বলছে, ঐ মেয়েটির পিতা নেই, তাদের বাড়ী কুমারখালিতে। মেয়েটির মা শিরীন আক্তার দুই মেয়ে নিয়ে উক্ত ফ্লাটে বসবাস করেন। শিরীন আক্তার বলেন, হাফিজ আমার ফুপাতো বোনের ছেলে। আমার বাসায় দুপুরে খেতে এসেছিল তখন আমি বাইরে ছিলাম, কিন্তু বাসায় আমার বড় মেয়ে ছিল। শিরীনের বড় মেয়ে শবনম মমতাজ বলেন, ভাইয়ার সঙ্গে দুই বছর আগে পারিবারিকভাবে আমার বাগদান হয়েছে। ছাত্রলীগের কমিটির কারণে বিয়ে হচ্ছে না। কমিটি ভেঙে গেলে বিয়ে করবেন। সে দুপুরে খেতে এসেছিলেন কিন্তু ছাত্রলীগের বেশ কিছু ছেলে এসে দরজা ভেঙে ভাইয়াকে টেনে হিঁচড়ে মারধর করতে করতে নিয়ে যায়। প্রতিবেশী নার্গিস খাতুন বলেন, হাফিজ দুই বছর ধরে ওই বাসায় আসা-যাওয়া করেন। তাঁদের জানানো হয়েছে হাফিজ আমার বড় মেয়ের স্বামী। মা, মেয়ে এবং প্রতিবেশীর ভাষ্যমতে সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় যে, চ্যালেঞ্জ ওই বাসাতে কোন খারাপ কাজে লিপ্ত ছিল। তা না হলে তিনি বাথরুমের ফলস ছাদের মধ্যে পালাবেন কেন, সবার মনে একই প্রশ্ন? তিনি যে বিবাহিত পাড়া-প্রতিবেশীরা তা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন। মেয়ে বলছেন দুবছর আগে আমাদের বাগদান হয়েছে প্রতিবেশীরা বলছেন বিবাহ হয়েছে। যদি বিবাহিত হন তাহলে তিনি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক কিভাবে হলেন।
এদিকে চ্যলেঞ্জের গাড়ীর ড্রাইভার এক ভিডিও বার্তায় বলেন, আমি রেন্ট এ কার চালাই, আমার গাড়ী ভাড়া নিয়ে জেলা ছাত্র লীগের সাধারন সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ গাড়ীতে বসেই ইয়াবা ফেনসিডিল সহ বিভিন্ন নেশাদার জাতীয় দ্রব্য আনা নেওয়া করতো, গাড়ির ভিতরে মেয়েদের নিয়ে বেশিরভাগ সময় ঘুরে বেড়াতো, কুষ্টিয়া চৌড়হাঁস ফুলতলা থেকে ভিতরে রাস্তার বাম হাতে একটি বাসা বাড়িতে নারী দিয়ে দেহ ব্যবসা করে যাচ্ছে, আমার গাড়িতে বসে বিভিন্ন নেতাদের সাথে নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন, গাড়ির ভেতরে বসে বিভিন্ন ব্যক্তিদের কাছ থেকে চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা নিয়েছে, অন্ধকার ঝোড়ের মধ্যে লোকজনদেরকে ধরে নিয়ে গিয়ে গলায় ছুরি ধরে টাকা আদায় করেছে। তবে তিনি মাঝে মধে অন্য গাড়ীও ব্যবহার করতো। তবে করোনা কালীন সময়ে দৌলতপুর থেকে মাদক এনে ব্যবসা করে অঢেল সম্পত্তির মালিক বনে গেছেন বলে সত্যতা পাওয়া গেছে।
কুষ্টিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ দেলোয়ার হোসেন জানান, হাফিজ দীর্ঘদিন থেকে ওই বাড়ীতে বিভিন্ন মেয়ে নিয়ে বসবাস করে আসছিল বলে এলাকাবাসী জানায়। গতকাল স্থানীয় জনসাধারণ খবর পেয়ে ওই বাড়ীতে যেয়ে তাকে ধরে। এ সময় বিক্ষুদ্ধ জনতার হাতে সে প্রহারের শিকার হয়েছে। আমরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণ করেছি।
আহত শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ জানান, সে ষড়যন্ত্রের শিকার। তার উপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করা হয়েছে। কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী জানান, একটি দলের সাধারণ সম্পাদক সে। সেটা যে ঘটনাই হোক না কেন। এক জায়গায় বসে বিষয়টা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করা যেত। এমন ভাবে তাকে প্রহার করা কোন ক্রমেই উচিত হয়নি। অবশ্যই অপরাধীদের চিহ্নিত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এদিকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মিসহ স্থানীয় জনতার অভিযোগ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুল হাফিজ, সে তো শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ। জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক কোন প্রহারের শিকার হননি। হয়েছেন বিয়ে না করে অবৈধভাবে মেয়ের সাথে বসবাসরত শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ। এ ব্যাপারে তারা সুষ্ঠু তদন্তপুর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানান ।