রেদোয়ানুল হক সবুজ :
ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে সরকারের কোটি টাকা নয়ছয় ও আত্মসাতের অভিযোগে কুষ্টিয়া শহর সমাজসেবা কর্মকর্তা জহিরুল ইসলামকে সম্প্রতি পঞ্চগড় জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিবন্ধন কর্মকর্তা হিসেবে বদলি করা হয়েছে। যদিও প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় কুষ্টিয়া শহর সমাজসেবা কর্মকর্তা জহিরুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্তসহ বিভাগীয় মামলার সুপারিশ করা হয় ওই তদন্ত প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই কর্মকর্তা ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকারি ভূ-সম্পত্তির বিষয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে সম্পত্তিটি ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিয়ে কার্যত অর্পিত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার প্রমাণ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে গত ১২ মার্চ সমাজসেবা অধিদপ্তরের কার্যক্রম অধিশাখা থেকে মহাপরিচালক ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল স্বাক্ষরিত একটি চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে কুষ্টিয়া শহর সমাজসেবা কর্মকর্তা জহিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে নানা আর্থিক অনিয়ম ও সরকারি দায়িত্ব পালনে অবহেলার সুনির্দিষ্ট ১৫টি বিষয় উল্লেখ করা হয়। চিঠিতে বলা হয়, ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে শুরু করে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত সময়কালে নানা খাতে অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে অধিদপ্তরের নিজস্ব আর্থিক সঞ্চয়ে গড়ে তোলা এক কোটি টাকার এফডিআরের বিপরীতে র্কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই বিধি বহির্ভূতভাবে শহর সমাজসেবা কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম ৪২ লাখ ৫০ হাজার টাকা সুদসহ ঋণগ্রহণ করেন এবং ব্যয় করেন। আর ডায়াবেটিক ফাউন্ডেশনের ৩টি কক্ষ নির্মাণ খাতে ২৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার আর্থিক অনিয়ম করেন। উপপরিচালক (ইউসিডি) উন্নয়ন ব্যয় সাময়িক বন্ধ রাখার মৌখিক নির্দেশনা দিলেও জহিরুল ইসলাম ৩০ লাখ টাকা ঋণ উত্তোলন করেন। আইএফআইসি ব্যাংকে থাকা ১ কোটি টাকার এফডিআর থেকে সব মিলিয়ে ৭২ লাখ ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করায় হিসাবটির সঞ্চয় এখন অতি নগণ্য। এ ছাড়া ৪টি ব্যাংক হিসাবে সর্বশেষ স্থিতির পরিমাণ ১১ লাখ ৫২ হাজার ৪৫০ টাকা, যা খুবই নগণ্য। এই খাতের টাকাও হীন উদ্দেশ্যে তছরুপ করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান। এভাবে নানা উন্নয়ন খাতের প্রকল্পে ব্যয় দেখিয়ে লাখ লাখ টাকার অনিয়মের কথা উল্লেখ করা হয়েছে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক স্বাক্ষরিত জহিরুল ইসলামকে চাকরিচ্যুতকরণ নির্দেশনার ওই চিঠিতে।
উক্ত কার্যালয়ে ২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন মো. জহিরুল ইসলাম। তার বিরুদ্ধে শহর সমাজ উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন নীতিমালা অনুসরণ না করে অননুমোদিত কমিটির মাধ্যমে আর্থিক অনিয়মসহ (ঋণগ্রহণ, ভবন নির্মাণ) বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা, জমি সম্পর্কে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে বিভ্রান্ত করা, বিভিন্ন ব্যয়ের ক্ষেত্রে সরকারি বিধিবিধান অনুসরণ না করার অভিযোগগুলোর কারণে সাময়িক বরখাস্তসহ বিভাগীয় মামলার সুপারিশ-সংবলিত ১১৯ পাতার ফিরিস্তি পাঠানো হয়েছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর।
তার বিরুদ্ধে ওঠা বিস্তর অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই চিঠিতে (বরখাস্তসহ বিভাগীয় মামলার সুপারিশের বিষয়ে অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের চিঠি) যা বলা হয়েছে প্রকৃত অর্থে ঘটনাটা এমন নয়। এর মধ্যে অনেক বিষয়ই আছে, যার কোনো ভিত্তি নেই। চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত ও বিভাগীয় মামলার সুপারিশের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। এ ছাড়া সরকারি চাকরির স্বাভাবিক নিয়মেই তাকে বদলি করা হয়েছে বলেও দাবি করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুষ্টিয়া জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আব্দুল লতিফ সেখ বলেন, শহর সমাজসেবা কর্মকর্তা জহিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের বিষয়ে আমি অবগত। তবে সর্বশেষ ওই অভিযোগের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন র্কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আমার কিছুই জানা নেই।