প্রতিবাদী কণ্ঠ ডেস্ক :
আদালতের এ আদেশ লঙ্ঘন করে গত ৫ আগস্ট ভোরে পুলিশের সহযোগিতায় ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলামের ১২৩ কোটি টাকার সম্পত্তি নিলামে বিক্রি করে কুষ্টিয়ার বিশিষ্ট চাল ব্যবসায়ী আব্দুল রশিদের মালিকানাধীন রশিদ এন্টারপ্রাইজের নামে। পরে ওই ঘটনায় নিলামের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করেন ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম। আদালত অবমাননার মামলায় আদালতের স্থগিতাদেশ থাকার পরও ১২৩ কোটি টাকার সম্পত্তি ১৫ কোটি টাকায় নিলামে বিক্রি করার ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আর এফ হোসাইন, কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম, পুলিশ সুপার (এসপি) মো. খায়রুল আলম, ও নিলামে সম্পত্তি নেওয়া ব্যবসায়ী আব্দুল রশিদ হাইকোর্টে হাজির হন। রোববার (২১ আগস্ট) বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হয়। তাদের ব্যাখ্যার ওপর শুনানি শেষে আদেশের জন্য সোমবার (২২ আগস্ট) দিন নির্ধারণ করেছেন আদালত। একই সঙ্গে সেদিন তাদের সকলকে উপস্থিত থাকতে বলেছেন আদালত।
শুনানিকালে আদালতের প্রশ্নের জবাবে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. সাইদুল ইসলাম জানান, এই সম্পত্তি সম্পর্কে আমার কোনও ধারণা নেই। আমি কিছুই জানি না। পুলিশ সুপার (এসপি) মো. খায়রুল আলম আদালতকে বলেন, আদালতের আদেশের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানার ওসি আমাকে অবহিত করেননি। যে কারণে বিষয়টি আমার জানা নেই। তখন এসপির উদ্দেশে আদালত বলেন, আপনি জেলার পুলিশ সুপার হিসাবে একজন ক্ষমতাবান কর্মকর্তা। এই ক্ষমতা আপনাকে দু’ভাবে ভোগ করার সুযোগ রয়েছে। এক, জনগণের সেবা করে। দুই, স্বেচ্ছাচারীভাবে। এখন বলুন, আপনি এই ক্ষমতা কিভাবে ভোগ করেন ? জবাবে এসপি বলেন, জনগণের সেবার মাধ্যমে এই ক্ষমতা ভোগ করে থাকি। এরপর ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আর এফ হোসেনকে হাইকোর্ট বলেন, ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলামকে আপনারা একটি চিঠি দিলেন। সেখানে নিলাম হওয়া সম্পত্তি ৭ দিনের মধ্যে বুঝিয়ে দিতে বললেন। যদি সম্পত্তি বুঝিয়ে না দেয় তাহলে প্রশাসনের সাহায্য নেওয়ার কথা বলেছেন। যদি ওই সময়ের মধ্যে বুঝিয়ে না দেয় তাহলে আইনানুযায়ী প্রশাসনের সাহায্য নিতে আপনি কি কোনও চিঠি দিয়েছিলেন। জবাবে এমডি বলেন, আমি কোনও চিঠি দেইনি। এ পর্যায়ে আদালত বলেন, নিলাম কার্যক্রমের উপর আদালতের স্থগিতাদেশ রয়েছে সেটা জানার পর সেটা কি নিলাম ক্রয়কারী ব্যক্তিকে অবহিত করেছিলেন? এমডি বলেন, জানা নাই। এদিকে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় কুষ্টিয়ার সদর থানার ওসি দেলোয়ার হোসেন খান আদালতে হাজির হননি। তার আইনজীবী কোভিড সংক্রান্ত রিপোর্ট ও চিকিৎসকের সনদ আদালতে দাখিল করেন।
এরপর ডাকা হয় নিলামকৃত সম্পত্তি ক্রয়কারী ব্যক্তি রশিদ অ্যাগ্রো ফুড লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদকে। আদালত তার কাছে জানতে চান, নিলাম সম্পত্তি ক্রয়ের পর ব্র্যাক ব্যাংক কি আপনাকে তার দখল বুঝিয়ে দিয়েছে? জবাবে তিনি বলেন, জি ব্যাংক বুঝিয়ে দিয়েছে। আদালত বলেন, সেটা কিভাবে ? দখল বুঝিয়ে দেওয়ার কোনও কাগজ কি আপনার কাছে আছে ? তখন ওই ব্যবসায়ী বলেন, এ সংক্রান্ত কোনও কাগজ আমার কাছে নাই। এ পর্যায়ে আদালত বলেন, তাহলে কিভাবে আপনি ওই সম্পত্তির দখল নিলেন? নিজেই কি ওই সম্পত্তির দখল নিয়েছেন ? ব্যবসায়ী বলেন, ব্যাংক আমাকে নোটিশ দিয়েছে। কিন্তু দখল বুঝিয়ে দেওয়ার বিষয়ে কোনও কাগজ দেয়নি। শুনানি শেষে হাইকোর্ট সোমবার (২২ আগস্ট) আদেশের জন্য দিন ধার্য করেন।
কুষ্টিয়ার ডিসি ও এসপিকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহিত দেওয়ার জন্য আবেদন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন। আদালত ওই আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের আদেশের সময় আদালতে হাজির থাকতে নির্দেশ দেন। একইভাবে ব্র্যাক ব্যাংকের এমডিকে হাজিরা থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন তার আইনজীবী। আদালত সেই আবেদন নাকচ করে দিয়ে যথাসময়ে আদালতে হাজির থাকার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। আদালত বলেন, এটা আদালত অবমাননার মামলা। আদেশের সময় তাদের আদালতে হাজির থাকতে হবে।
এর আগে গত ১১ আগস্ট আদালতের স্থগিতাদেশ থাকার পরও ১২৩ কোটি টাকার সম্পত্তি ১৫ কোটি টাকায় নিলামে বিক্রি করার ঘটনায় ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আর এফ হোসাইন, কুষ্টিয়ার ডিসি মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম, এসপি মো. খায়রুল আলম, সদর থানার ওসি মো. সাব্বিরুল আলম ও নিলামে সম্পত্তি নেওয়া ব্যবসায়ী আব্দুল রশিদকে তলব করেন হাইকোর্ট। বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দিয়েছিলেন। আদালতে সেদিন রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মমতাজ উদ্দিন ফকির ও ব্যারিস্টার রাগিব রউফ চৌধুরী। অপরপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট নুরুল আমীন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। ডিসি ও এসপির পক্ষে আইনজীবী মুন্সী মনিরুজ্জামান ও ইউসুফ খান, ব্র্যাকের এমডির পক্ষে আইনজীবী সৈয়দ মিনহাজুল হক শুনানিতে ছিলেন। অন্যদিকে ব্যবসায়ী শফিকুলের পক্ষে ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী শুনানি করেন।
আদালত অবমাননার মামলার শুনানি নিয়ে আদালতের আদেশ অমান্যের অভিযোগে ব্যাখ্যা দিতে ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আর এফ হোসাইন, কুষ্টিয়ার ডিসি মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম, এসপি মো. খায়রুল আলম, সদর থানার ওসি মো. সাব্বিরুল আলম ও নিলামে সম্পত্তি নেওয়া ব্যবসায়ী আব্দুল রশিদকে তলব করেন হাইকোর্ট। তাদেরকে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন আদালত। গত ১১ আগস্ট বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।