আলোচনায় আবারও সেই আব্দুল মতিন। তাঁর লোকজন কোটি টাকার ব্যাগ নিয়ে শুরু করেছেন দৌড়ঝাঁপ। উদ্দেশ্য, বিআইডব্লিউটিএ’র প্রধান প্রকৌশলীর চেয়ারে যাতে পছন্দের লোকটিকে বসাতে পারেন। সেই সুবাদে নিজেরা বিগত সময়ের মতো কামাতে পারবেন দু’হাত ভরে। তবে আব্দুল মতিনের ভাষ্য, দীর্ঘদিন তিনি প্রধান প্রকৌশলী ছিলেন। নিয়মানুসারে এলপিআরে গেছেন। এক্সটেনশনের আপাতত ইচ্ছে নেই। তবে কর্তৃপক্ষ জোরাজোরি করলে তখন তো পুণরায় বসতেই হবে-এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে, বিআইডব্লিউটিএ’র সাধারণ কর্মকর্তা কর্মচারীরা চাইছেন এই পদে সিনিয়রটি বেসিস নতুন মুখ। তাতে কাজের গতি বাড়বে ও আভিজাত্যবোধ প্রকট হবে। চাকরির প্রতি শ্রদ্ধা না জন্মালে কোনো সংস্থাই ভালো চলে না। তাই বিআইডব্লিউটিএ’র মতো প্রতিষ্ঠানে কোনো বিশেষ ব্যক্তির পদ আঁকড়ে পৈতৃক ঘরবাড়ি বানানোর সুযোগ দেয়া উচিত নয় বলে মনে করছেন তাঁরা।
প্রতিষ্ঠান সূত্র বলছে, আব্দুল মতিন ২০০৬ সাল হতে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১৬ বছর প্রধান প্রকৌশলী ছিলেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষে। এ পদে দায়িত্ব পালন করার পর গত ৩০ জুন ২০২১ এলপিআরএ যান। পরবর্তীতে জেষ্ঠতা অনুসারে প্রকৌশলী মো: রকিবুল ইসলাম তালুকদারকে প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব প্রধান করা হয়। আব্দুল মতিন ১৬ বছর দায়িত্ব পালন করার পর আবারও ২ বছর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জন্য বিভিন্ন মহলে কোটি কোটি টাকা উৎকোচ দেয়ার চেষ্টা করছেন। উনি পুণ:দায়িত্ব পেলে প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীরা পদ বন্চিত হবেন। ফলে চেইন অফ কমান্ড থাকবে না। নিচের লেভেলের কর্মকর্তাদের মাঝে অসন্তোষ সৃষ্টি হবে এবং কাজের পরিবেশ নষ্ট হবে বলে মনে করেন অন্য প্রকৌশলীরা।
উল্লেখ্য, আব্দুল মতিন বিএনপি জোট সরকারের সময় ২০০৬ সালে খালেদা জিয়ার বোন খুরশীদ জাহান হকের পিএস ডিউকের মাধ্যমে প্রধান প্রকৌশলী হয়েছিলেন। সে সময় তিনি মোটা অংকের টাকাও দিয়েছিলেন ডিউককে-এমন জনশ্রুতি রয়েছে। তার নিজের বাড়িও দিনাজপুরে। পুরনো পরিচিত হওয়ায় পারিবারিক সখ্যতা এখনও বিদ্যমান। জোট সরকারের বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ের ও বিএনপি নেতাদের এখনো আব্দুল মতিন নিয়মিতভাবে অর্থ প্রদান করেন।
আব্দুল মতিন ২০০৩ সালে ড্রেজিং বিভাগের ত্বত্তাবধায়ক প্রকৌশলী হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন। খালেদা জিয়ার ভাগিনা দিনাজপুরের ডন সাহেবের সহযোগিতায় তৎকালিন সময়ে ২ বছরে ২টি পদোন্নতি নিয়ে ২০০৬ সালে প্রধান প্রকৌশলী ড্রেজিং হিসাবে দায়িত্ব গ্রহন করেন। খালেদা জিয়ার ভাগিনার সহযোগী থাকায় ১/১১ সময়ে টাস্ক ফোর্সের কর্মকর্তাদের ভয়ে বহুদিন পলাতক ছিলেন। এর অন্যতম কারন, প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে হাজার কোটি টাকা তখন ভাগ বাটোয়ারা করেছেন। পাচার করেছেন বিদেশে। এমনকি একাধিক ঠিকাদারি ব্যবসায় বিনিয়োগ করছেন বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের একাধিক কর্মকর্তা কর্মচারী।
এখনও তিনি তার দুর্নীতির অর্থ ডিউক ও তার সহযোগী ড. রিয়াজ হাসানের মাধ্যমে বিএনপিকে দিচ্ছেন। বিএনপির ভেতর থেকেও আব্দুল মতিনের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ব্যাপারে লবিং করা হচ্ছে-নিশ্চিত করেছেন বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তারা। তাদের যুক্তি ১৬ বছর একই ব্যক্তির কেন প্রধান প্রকৌশলী পদ আঁকড়ে থাকতে হবে? দেশে কি আর যোগ্য লোক নেই?