শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৪৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
ছাদ থেকে হাত-পা বেঁধে ফেলে কলেজ ছাত্রকে হত্যার অভিযোগ : প্রতিবাদী কন্ঠ কোরআন পড়া শেষ করে বাড়ী ফিরতে গিয়ে মাইক্রোবাসের চাপায় ৪ শিশু নিহত : প্রতিবাদী কন্ঠ কুষ্টিয়া দৌলতপুরের ৩৫ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি: প্রায় ২৪ কোটি টাকার ক্ষতির শঙ্কায় কৃষক : প্রতিবাদী কন্ঠ ভেড়ামারা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা তরুণ কুমারের ঘুষ বাণিজ্য তুঙ্গে : প্রতিবাদী কন্ঠ সাবেক এমপি হানিফের আশির্বাদে দেলোয়ার বিশ্বাস পিওন থেকে পোস্টমাষ্টার : প্রতিবাদী কন্ঠ কুষ্টিয়ার মাদক সম্রাট পোল্লাদ এখন কোটিপতি, প্রশাসনের নিরাবতা আজ প্রশ্নবিদ্ধ! : প্রতিবাদী কন্ঠ কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের প্রধান সহকারি এখন অর্ধশত কোটি টাকার মালিক : প্রতিবাদী কন্ঠ পদ্মার তীব্র ভাঙনে হুমকির মুখে কুষ্টিয়া-ঈশ^রদী মহাসড়ক : প্রতিবাদী কন্ঠ কুষ্টিয়া মঙ্গলবাড়ীয়ার মাদক সম্রাট ও সন্ত্রাসী রাকিবুলকে গণধোলাই : প্রতিবাদী কন্ঠ তিতাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হামলায় আহত বিডি টাইমসের সম্পাদক নোমান রহমান : প্রতিবাদী কন্ঠ

কুষ্টিয়া মিরপুরবাসীর আতঙ্কের অপর নাম সন্ত্রাসী আতাহার আলী : প্রতিবাদী কন্ঠ

নিজস্ব প্রতিনিধি :
  • প্রকাশিত সময় : রবিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৪
  • ৩৭ পাঠক পড়েছে

নিজস্ব প্রতিনিধি
কুষ্টিয়া মিরপুরবাসীর আতঙ্কের অপর নাম সন্ত্রাসী আতাহার আলী। কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের শিমুলিয়া গ্রামের তালিকাভুক্ত রাজাকার মনোয়ার হোসেন মনোর পুত্র ও রাজাকার শহর আলীর ভাই আতাহার আলী। তিনি মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের বার বার বহিষ্কৃত নেতা। ফুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। সন্ত্রাসী আতাহার বাহিনীর কাছে জিম্মি স্থানীয় প্রায় এক হাজার ব্যবসায়ী। তার অপকর্মের প্রতিবাদ করলেই লাইসেন্সকৃত পিস্তল ব্যবহার করে শীর্ষ এ সন্ত্রাসী। একাধিকবার এই সন্ত্রাসীকে প্রকাশ্যে অস্ত্র দিয়ে সাধারণ মানুষকে গুলি করা হুমকি দিতে দেখা গেছে। প্রশাসনের কাছে আতাহারের বেশ কদর থাকায় কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। আতাহার ও তার বাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না মুক্তিযোদ্ধা বুদ্ধিজীবীসহ আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীরাও।
গত শনিবার ১৩ তারিখ সন্ধ্যা রাতে মিরপুর উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের শিমুলিয়া বাজারে আতাহার আলী নিজ নামীয় লাইসেন্সকৃত নাইন এমএম পিস্তল দিয়ে এলোপাথাড়ি গুলিবর্ষণ শুরু করেন। এ সময় সেখানে থাকা ভ্যানচালক রেজাউল ও হাশেম গাজী নাদের দুই ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হন। পরে স্থানীয়রা গুলিবিদ্ধ রক্তাক্ত জখম গুরুতর আহত দুইজনকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। অবস্থার অবনতি হলে হাশেম গাজীকে রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন চিকিৎসকরা। এ ঘটনায় আতাহার আলীকে আটক করেছে পুলিশ।
তথ্য সূত্রে জানা গেছে, একাধিক মন্ত্রী-এমপি ও দলের শীর্ষ নেতাদের নাম ভাঙ্গিয়ে এলাকার আধিপত্য বিস্তার করেছে। চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী, নারী নির্যাতন, নারী কেলেঙ্কারি, অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয়রা জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা আতাহার আলী বর্তমানে চরম বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। তার ক্যাডারদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন সাবেক কাউন্সিলর বিল্লাল হোসেন, রবিউল, মিন্টু, উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা আতাহার আলীর ভাগ্নে সাদ্দাম, আয়নাল, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সাদমী ও যুবলীগ নেতা মোর্শেদ। তারা সবাই পুলিশ মারপিট মামলার আসামি মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসী নামে এলাকায় পরিচিত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তালিকায়ও উঠে এসেছে তাদের নাম।
২০২৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর উপজেলার নওয়াপাড়া বাজার কমিটি গঠন নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে বাজার কমিটির সদস্য ইমাম আলী ও মাসুদ কবিরাজকে লাইসেন্সকৃত পিস্তল বের করে প্রকাশ্যে গুলি করার হুমকি দেন আতাহার আলী। ক্যাডার বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে ওই পিস্তল হাতে বাজার এলাকায় মহড়া দেন তিনি। সে সময় পিস্তল হাতে হুমকি দেওয়ার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সীমাহীন চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ নওপাড়া বাজারের ব্যবসায়ীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ীর অভিযোগ, সব ব্যবসায়ীকে দোকান প্রতি মাসে চাঁদা দিতে হয়।
জানা যায়, উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের গোলাম মোস্তফার সাত বিঘা জমি, শিমুলিয়ার আদমের বেশ কয়েক বিঘা জমি দখল করেছেন আতাহার আলী। এক রাতের মধ্যে তার বাহিনী দিয়ে হামলা-ভাঙচুর করে ওই সকল জমি দখলে নেন তিনি। সেখানে এখন লিচু ও আম বাগান গড়ে তুলেছেন। জমি দখলের ঘটনায় ভুক্তভোগীরা অনেক চেষ্টা তদবির করেও জমি ফেরত পাননি। প্রতিবাদ করে তারা এলাকা ছাড়া ও মামলার স্বীকার হয়েছেন। জমি ফেরত চাইতে গেলে শিমুলিয়া গ্রামের জাকির হোসেন মিথ্যা মামলার স্বীকার হন। পরবর্তীতে জাকির হোসেন জেল হাজতে মৃত্যুবরণ করেন। এই রকম অসংখ্য পরিবার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আতঙ্কে জীবন-যাপন করছেন। আবার অনেকেই এলাকা ছেড়েছেন।
অপরদিকে গত বছরের ২৪ মে মিরপুর বাজারে আধিপত্য বিস্তার করতে আতাহার আলী তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে দেশীয় অস্ত্রের মহড়া দেয়। এ সময় তার লাইসেন্সকৃত পিস্তল ফাঁকা গুলিবর্ষণ করেন। এসময় বাজারের ৫ শতাধিক ব্যবসায়ী দোকান বন্ধ করে দেন। তার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও দৌরাত্ম্যর স্বীকার হয়েছেন মিরপুর পৌরসভার ৯নম্বর ওয়ার্ডের যোগীপুল এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ। তিনি জানান, গত বছরের রমজান মাসের শেষের দিকে যোগীপুল মসজিদে নামাজ আদায় করে বের হওয়ার সময় রাজাকার পুত্র আতাহার আলী আমাকে বলে মসজিদ কমিটিতে তার নাম রাখতে হবে। অস্বীকৃতি জানালে আমাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন আতাহার। তার হাতে আরও লাঞ্ছিত হয়েছেন কুড়িপোল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম মহাদ্দেস। তিনি জানান, গত বছরের মে মাসে নওপাড়া বাজারে পিয়াস ফার্মেসিতে ওষুধ কিনতে গেলে আতাহার ও তার লোকজন আমার উপর অতর্কিত হামালা চালায়।
মিরপুর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি ইমন আলী বলেন, রাজাকার পুত্র আতাহারের হাতে আমি কয়েক দফা শারীরিক লাঞ্ছিত হয়েছি। তিনি আমাকে দল বাদ দিয়ে তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সঙ্গে যোগ দিতে বলে। এতে অস্বীকৃতি জানালে আমাকে লাঞ্ছিত করেন। সূত্রে আরও জানা যায়, ২০১৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর তৎকালীন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার নজরুল করিমকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও লাঞ্ছিত করে। এ ঘটনার প্রতিবাদে পরদিন মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। ২০০৮ সালে মিরপুরে মির্জানগরে আবুল খায়ের কোম্পানির তামাক বাইং কোর্টে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে জোরপূর্বক তামাকের রেট বাড়াতে গেলে কোম্পানির কর্মচারী এবং স্থানীয়দের গণপিটুনির শিকার হন আতাহার আলী। ২০২২ সালে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আতাহার আলী নৌকার টিকিট পেলে নির্বাচন করে পরাজিত হন। ওই নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ দপ্তর সম্পাদক নুরুল ইসলামসহ তার সমর্থকদের মারপিট করে হাসপাতালে পাঠায়। এছাড়াও ৯টি ওয়ার্ডে অংশগ্রহণকারী প্রায় ২০ জন ইউপি সদস্য প্রার্থীদের বিজয়ী করার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। তিনি পুলিশ হেফাজতে থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
মিরপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোস্তফা হাবিবুল্লাহ জানান, শনিবার সন্ধ্যায় গুলিবর্ষণের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ফুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আতাহার আলী ও তার ভাতিজা রিগ্যান এবং ভাগিনা আয়নালকে আটক করছে পুলিশ। এছাড়া ঘটনাস্থলে নতুন করে উত্তেজনা ঠেকাতে উক্ত এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করে আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর
© All rights reserved © 2021-2022 । প্রতিবাদী কন্ঠ
Design and Developed by DONET IT
SheraWeb.Com_2580