অবশেষে কাঙ্ক্ষিত জয় পেল বাংলাদেশ। এর আগে নিউজিল্যান্ড সিরিজে সর্বশেষ ওয়ানডে খেলেছে বাংলাদেশ। যেখানে ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ করে হার হজম করেছে বাংলাদেশ। তারপর শ্রীলঙ্কার মাটিতে প্রথম টেস্টে কষ্টার্জিত ড্রয়ের পর বাজেভাবে হেরেছে দ্বিতীয় টেস্টে। এবার প্রথম ওয়ানডেতে সফরকারী শ্রীলঙ্কাকে ৩৩ রানে হারিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। শুরুতে ব্যাট করে তামিম-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর ফিফটিতে ভর করে ৬ উইকেটে ২৫৭ রান তুলে বাংলাদেশ। জবাবে ১১ বল বাকি থাকতেই ২২৪ রানেই গুটিয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশ তাদের সর্বশেষ ওয়ানডে জিতেছিল ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে।
টস জিতে ব্যাটিং নিয়ে শুরুতেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। চামিরার বলে ডি সিলভার তালুবন্দী হয়ে রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরে ফিরেছেন লিটন। অপর পাশে তামিম যখন দারুণ গতিতে রান তুলে যাচ্ছেন, সাকিব অপর পাশে ছিলেন ধৈর্যের প্রতিমূর্তি হয়ে। কিন্তু হঠাৎই যেন তাতে ছেদ পড়ল। গুনাথিলাকাকে তুলে মারতে চেয়েছিলেন বোলারের মাথার ওপর দিয়ে। টাইমিংয়ে গড়বড় হয়ে তা গেল নিশাঙ্কার হাতে। ৩৪ বলে ১৫ রান করে ফেরেন সাকিব।
শুরু থেকেই দারুণ ব্যাট চালাচ্ছিল তামিম ইকবাল। তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের ৫০ তম ফিফটি। মাত্র ৬৬ বলে ৬টি চার ও ১টি ছয়ে ৫০ পূর্ণ করেন দেশসেরা ওপেনার। তবে বেশিদূর এগোতে পারলেন না। ফিফটির পর মাত্র ২ রান যোগ করে ধনাঞ্জয়া ডি সিল্ভার বলে এলবিডব্লিউর শিকার হয়ে ফেরেন সাজঘরে। ধনাঞ্জয়ার ইয়র্কার লেগ সাইডে খেলতে চেয়েছিলেন তামিম; কিন্তু বল লাগে পায়ে। রিভিউ নিয়েও রক্ষা হয়নি।
তামিম আউট হওয়ার পর মাঠে এসে প্রথম বলেই ০ রানে আউট হন মোহাম্মদ মিথুন। পরপর দুই বলে দুই উইকেট হারিয়ে বিপদে বাংলাদেশ। ধনাঞ্জয়ার বলে সুইপ করতে চেয়েছিলেন মিথুন। কিন্তু বল ব্যাট মিস করে লাগে মিথুনের পায়ে। জোরালো আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। ০ রানে ফেরেন সাজঘরে। প্রথম চার ব্যাটসম্যানের মধ্যে দুজনই ফেরেন খালি হাতে।
এরপর সেঞ্চুরিবঞ্চিত হয়েছেন মুশফিক। লাকশান সান্দাক্যানের বলে পরের ওভারে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে ধরা পড়েন ইসুরু উদানার হাতে। আউট হওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৮৭ বলে ৮৪ রান। তার ইনিংসটি সাজানো ছিল ৪টি চার ও ২টি ছয়ের মারে।
ইসুরু উদানার বলে ওয়াইড লং অফ দিয়ে ডাবলস নিয়ে ক্যারিয়ারের ২৪তম হাফসেঞ্চুরির দেখা পান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ৬৯ বলে ২টি চার ও ১টি ছয়ে অর্ধশতক হাঁকান তিনি। তবে এরপর আর বেশিক্ষণ ক্রিজে অবস্থান করতে পারেননি তিনি। ৭৬ বলে করেন ৫৩ রান।
শেষদিকে ২২ বলে ২৭ রান তুলেন আফিফ হোসেন। এছাড়া ৯ বলে ১৩ রান করেন সাইফউদ্দিন।
শ্রীলঙ্কার পক্ষে সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট নেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা।
তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে তামিম-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহদের ফিফটিতে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটের বিনিময়ে ২৫৭ রান সংগ্রহ করেছে স্বাগতিক বাংলাদেশ । ২৫৮ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকে সাবধানী ব্যাট চালাচ্ছিলেন লঙ্কান দুই ওপেনার গুনাথালিকা ও কুশাল পেরারা। দলীয় ৩০ রানে লঙ্কান শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন মিরাজ। গুনাথালিকাকে নিজের বলেই তালুবন্দী করেন তিনি। ১৯ বলে ২১ রান করে ফিরেন লঙ্কান এই ওপেনার।
এরপর লঙ্কান শিবিরে নিজের প্রথম ওভারেই উইকেটের দেখা পান মোস্তাফিজ। নিশাঙ্কাকে আফিফের ক্যাচ বানিয়ে ফেরান তিনি। সাজঘরে ফেরার আগে ১৩ বলে ৮ রান তুলেছেন নিশাঙ্কা।
মিরাজ-মোস্তাফিজ শুরুতে দুই উইকেট তুলে নিয়ে শ্রীলঙ্কাকে চাপে ফেলেছিল বাংলাদেশ। টাইগার বোলারদের বিপক্ষে সাবলীলভাবে ব্যাট চালিয়েছেন পেরেরা ও মেন্ডিস। বাংলাদেশের কপালে চিন্তার ভাঁজ আসতেই স্বস্তি এনে দিলেন সাকিব আল হাসান। তার ঘুর্ণিতে পরাস্ত হয়েছেন কুশাল মেন্ডিস। তার ব্যাট থেকে আসে ২৪ রান।
এবার মেহেদী হাসান মিরাজ ফেরান কুশল পেরেরাকে। আউট হওয়ার আগে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৩০ রান আসে পেরেরার ব্যাট থেকে। এরপরের ওভারেই মিরাজ ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে বোল্ড করে ফেরান সাজঘরে। তার জোড়া আঘাতে ১০০ রানের আগেই লঙ্কানরা হারিয়ে ফেলে ৫ উইকেট।
দলীয় স্কোরকার্ডে মাত্র ৫ রান যোগ হতেই লঙ্কান শিবিরে ফের মিরাজের আঘাত। এবার মিরাজের ঘূর্ণিতে পরাস্ত হয়ে বোল্ড হলেন আশেন বান্দারা। শ্রীলঙ্কার পাল্টা আক্রমণে দ্রুত এগোনো জুটি ভাঙলেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। তরুণ এই অলরাউন্ডার বোল্ড করে দিলেন দাসুন শানাকাকে। ২৫ বলে ১৪ রান করেন শানাকা। তার বিদায়ে ভাঙে ৪০ বল স্থায়ী ৪৭ রানের জুটি।
বাংলাদেশের জন্য ক্রমেই বিপদজনক হয়ে উঠেছিল হাসারাঙ্গা। ব্যাট হাতে ভয়ানক হয়ে উঠা ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে ফেরেন এ তরুণ টাইগার পেসার। ৭৪ রানে ফিরিয়ে হাসারাঙ্গাকে সেঞ্চুরি বঞ্চিত করেন সাইফউদ্দিন।
সাইফের পর লঙ্কান ব্যাটিং লাইন-আপে আঘাত করলেন মুস্তাফিজুর রহমানও। তারকা এ পেসার বিদায় করলেন ইসুরু উদানাকে। দুজনের আউটে স্বস্তি মেলে বাংলাদেশ শিবিরে।