বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে বিদেশে কাজ হারিয়ে গত সাড়ে চার মাসে দেশে ফিরে এসেছেন ৭০ হাজারেরও বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি। গত ১ এপ্রিল থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত ২৩টি দেশ থেকে দেশে ফিরেছেন ৭০ হাজার ৪২৭ জন প্রবাসী।
এর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী দেশে ফিরেছেন বলে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, গত সাড়ে চার মাসে বিশ্বের ২৩টি দেশ থেকে ৭০ হাজার ৪২৭ জন প্রবাসী কাজ হারিয়ে দেশে ফিরেছেন। এর মধ্যে পুরুষ কর্মী রয়েছেন ৬৭ হাজার ১১৯ জন। আর নারী কর্মী রয়েছেন ৩ হাজার ৩০৮ জন।
দেশে ফেরা কর্মীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এসেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ না থাকায় সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ফিরেছেন ২৩ হাজার ৫০২ জন। এর মধ্যে পুরুষ কর্মী ২২ হাজার ৫৭৩ জন। আর নারী কর্মী ফিরেছেন ৯২৯ জন।
সৌদি আরব থেকে ১২ হাজার ৯৫০ জন প্রবাসী কর্মী ফেরত এসেছেন। এর মধ্যে পুরুষ ১১ হাজার ৮৭৪ জন, আর নারী কর্মী রয়েছেন ১ হাজার ৭৬ জন। সৌদি ফেরত কর্মীদের মধ্যে বেশিরভাগই বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে আউটপাস নিয়ে দেশে ফিরেছেন।
করোনা ভাইরাসের প্রেক্ষিতে কাজ না থাকায় মালদ্বীপ থেকে ফিরেছেন ৭ হাজার ৭৫৯ জন প্রবাসী কর্মী। কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ায় সিঙ্গাপুর থেকে ফিরেছেন ১ হাজার ৩৮২ জন। বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে ওমান থেকে দেশে ফিরেছেন ৩ হাজার ৬৪৫ জন। ভিসার মেয়াদ না থাকায় কুয়েত থেকে দেশে ফিরেছেন ৭ হাজার ৩২৯ জন। বাহরাইন থেকে ফিরেছেন ৭৪৬ জন।
কাজ না থাকায় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফিরে এসেছেন ৭১ জন প্রবাসী। কাতার থেকে ফিরেছেন ৬ হাজার ৬৮ জন। মালয়েশিয়া থেকে ফিরেছেন ১ হাজার ৮৩৮ জন। চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ফিরেছেন ১০০ জন। কাজ না থাকায় থাইল্যান্ড থেকে ফিরেছেন ২০ জন, মিয়ানমার থেকে ৩৯ জন, জর্ডান থেকে ৪৮১ জন এবং ইরাক থেকে ফিরেছেন ১ হাজার ৪১৯ জন। কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ায় ভিয়েতনাম থেকে ফিরেছেন ১২২ জন এবং শ্রীলংকা থেকে ৮০ জন।
অন্যদিকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে ইতালি থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে ১৫১ জন প্রবাসী বাংলাদেশিকে। এই ১৫১ জন প্রবাসী গত ৬ জুলাই বাংলাদেশ থেকে ইতালি গেলে তাদের ফেরত পাঠানো হয়। পরে দেশে ফিরলে সবাইকে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়।
এছাড়া লেবানন থেকে ৪৪৪ জন, রাশিয়া থেকে ১০০ জন, মরিশাস থেকে ২০ জন, কম্বোডিয়া থেকে ৪০ জন প্রবাসী কর্মী দেশে ফেরত এসেছেন।
প্রবাসী কর্মীরা বিদেশে কাজ হারিয়ে দেশে ফিরে আসার পর ব্যবসা করার জন্য সরকার থেকে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা ঋণ সহায়তা পাচ্ছেন। আর বিমানবন্দরে ফিরেই পাচ্ছেন ৫ হাজার টাকা। কোনো প্রবাসী করোনায় আক্রান্ত হয়ে বিদেশে মারা গেলে তার পরিবার সরকার থেকে পাচ্ছে ৩ লাখ টাকা।
করোনাকালে প্রবাসী কর্মীদের কষ্ট করে হলেও বিদেশে টিকে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেছেন, করোনা মহামারিতে বিভিন্ন দেশও সংকটে পড়েছে। এক সময় এই সংকট আর থাকবে না। তাই এই সময়ে কষ্ট করে হলেও বিদেশে টিকে থাকার আহ্বান জানানা মন্ত্রী।
সৌদি আরবে প্রবাসী বাংলাদেশি যারা কাজ হারিয়েছেন তাদের অন্য পেশায় বিশেষ করে কৃষি কাজে যুক্ত করার জন্য দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন।
সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আল সউদের সঙ্গে করোনাকালে তিনবার টেলিফোনে আলাপ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আলাপকালে সৌদিতে কাজ হারানো প্রবাসী কর্মীদের কৃষি কাজে সম্পৃক্ত করার অনুরোধ জানান তিনি।