ভারতের অসম ও মেঘালয়ে ভারি বৃষ্টিপাত হওয়ায় এবং ঢলের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রবিবার বিকেল পর্যন্ত বগুড়ায় যমুনার পানি বিপদসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এছাড়া গাইবান্ধার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকায় নদ-নদীর পানি বিপদসীমার উপরে রয়েছে। অন্যদিকে পানিবন্দী মানুষের দুর্ভোগ পিরোপুুরের মঠবাড়িয়ায় সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় আমফানের জলোচ্ছ্বাসে বলেশ্বর নদ তীরবর্তী উপজেলার বড়মাছুয়া মোহনায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে হুমকির মুখে পড়েছে। এছাড়া কুড়িগ্রামে ধীর গতিতে কমছে নদ-নদীর পানি যার ফলে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের।
বগুড়া ॥ বগুড়ায় রবিবার বিকেল পর্যন্ত যমুনার পানি বিপদসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান জানান, যমুনা ও বাঙালী তীরের সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনটে বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়ে আছে। তবে উজানে ভারতের অসম ও মেঘালয়ে ভারি বৃষ্টি হওয়ায় এবং ঢলের তীব্রতা বেড়ে জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে বগুড়া অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে এমনটি আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত যমুনার ডান তীরে যে বাঁধ ও অবকাঠামো নির্মিত হয়েছে তা সুরক্ষিত আছে। উল্লেখ্য, পাউবো যমুনার ডান তীর রক্ষায় গত বছর চার কিলোমিটার তীরে ৩৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে শক্ত কাঠামোর বাঁধ নির্মাণ করে। এ ছাড়াও ব্রহ্মপুত্র নদের ডান তীরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের রোহদহ থেকে দড়িপাড়া পর্যন্ত সাড়ে তিন কিলোমিটার বাঁধ কর্নিবাড়ি থেকে চন্দনবাইশা পর্যন্ত প্রায় ৮ কিলোমিটার বিকল্প বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এই বাঁধগুলো নির্মাণের যমুনার পশ্চিম তীর সুরক্ষিত হয়েছে তবে বাঁধের ভেতরের অংশের গ্রামগুলো পাহাড়ী ঢলে ডুবে যায়। বর্তমানে নিচু এলাকা ডুবে গেছে। এইসব এলাকার লোকজন ঘরের ভেতরে কেউ হাঁটু পানির মধ্যে খাট ও চৌকির ওপর থাকছে।
গাইবান্ধা ॥ ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি কমা অব্যাহত থাকলেও তিস্তা এবং করতোয়া নদীর পানি কিছুটা বাড়ছে। ফলে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, বিপদসীমার ৫২ সে.মি. এবং ঘাঘট নদীর পানি বিপদসীমার ২২ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে ব্রহ্মপুত্রের পানি কমতে শুরু করায় নদী তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকায় ভাঙ্গন শুরু হয়েছে।
পিরোজপুর ॥ পিরোপুরের মঠবাড়িয়ায় সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় আমফানের জলোচ্ছ্বাসে বলেশ্বর নদ তীরবর্তী উপজেলার বড়মাছুয়া মোহনায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে হুমকির মুখে পড়েছে। এ বছর চলতি বর্ষা মৌসুমে এ ভাঙ্গন আরও তীব্র আকার ধারণ করছে। এতে ওই এলাকার বড়মাছুয়া লঞ্চঘাট, স্টিমারঘাট, বাজারসহ স্থানীয়রা শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন। ভুক্তভোগী এলাকাবাসী জানায়, কয়েক দফা ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে বড়মাছুয়া লঞ্চঘাট ও স্টিমারঘাট বাজার এলাকা দোকানপাট ও বসতিসহ দুই শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গত দেড়যুগ ধরে অব্যাহত এ ভাঙ্গনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
কুড়িগ্রাম ॥ কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি ধীর গতিতে কমতে থাকায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। নদ-নদীর তীরবর্তী চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের ঘর বাড়ি থেকে পানি নামতে শুরু করলেও দুর্ভোগ কমেনি বন্যাদুর্গতদের। চলমান করোনা ও বন্যা পরিস্থিতিতে হাতে কাজ না থাকায় খাদ্য সঙ্কটে পড়েছেন তারা।