কুষ্টিয়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর ভাস্কর্য ভাঙচুরের রেস কাটতে না কাটতেই এবার কুমারখালী কয়ার বিপ্লবী বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় কুমারখালী থানায় একটি মামলা করেছেন কয়া মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হারুন অর রশীদ।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ১৮ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার রাতের কোনো এক সময় কুমারখালী উপজেলার কয়া গ্রামে কয়া মহাবিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে সড়কে স্থাপিত ভাস্কর্যটিতে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা।
শুক্রবার সকালে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে আসেন কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজীবুল ইসলাম খান ও কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান।
বাঘাযতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনা জানতে চাইলে নির্বাহী কর্মকর্তা রাজীবুল ইসলাম খান বলেন, ‘ভাস্কর্যের ডান গালে ও নাকের ওপর আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
কুমারখালী থানায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেওয়ার আগে কয়া মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘মহাবিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। সকালে স্থানীয় বাসিন্দারা মোবাইলফোনে বলেন, কে বা কারা ভাস্কর্য ভাঙচুর করেছে।’
মহাবিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম যোদ্ধা ছিলেন বাঘা যতীন। এই কয়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি একাই বাঘের সঙ্গে লড়াই করে বাঘ হত্যা করেছিলেন বলে তিনি বাঘা যতীন নামে পরিচিতি পেয়েছিলেন। তার স্মৃতিকে ধরে রাখতে গ্রামের মহাবিদ্যালয়ের সঙ্গে ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়। কুমারখালী উপজেলা প্রশাসনের বাস্তবায়নে ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর তৎকালীন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার আবদুস সামাদ ভাস্কর্যের উদ্বোধন করেছিলেন।
ঘটনার রাতে ওই মহাবিদ্যালয়ে খলিলুর রহমান নামের এক নৈশপ্রহরী দায়িত্বে ছিলেন। তিনি বলেন, দিবাগত রাত ১টার দিকে তিনি জোরে একটি শব্দ শুনতে পান। এরপর কলেজের বাইরে এসে দেখতে পান তিনজন ব্যক্তি দুটি মোটরসাইকেলে করে সড়কের দুই দিক দিয়ে চলে যাচ্ছে।’
এদিকে কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাত বেলা দেড়টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ঘটনাস্থলে পিবিআই জেলা গোয়েন্দা পুলিশসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রয়েছেন
কুমারখালী থানার ওসি মজিবুর রহমান বলেন, ‘ওই মহাবিদ্যালয়ের সভাপতি নিজামুল হক, অধ্যক্ষ হারুন অর রশীদ, নৈশপ্রহরী খলিলুর রহমান ও কয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আনিসুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য
থানায় নেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় কুমারখালী থানায় কয়া মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হারুন অর রশীদ একটি মামলা করেছেন। যার মামলা নম্বর ১৪, তারিখ ১৮-১২-২০২০। মামলার তদন্ত চলছে। দ্রুত্ব এই ঘটনায় জড়িত আসামিদের গ্রেফতার করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এদিকে এই ঘটনায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এক বিবৃতিতে বৃটিশ বিরোধী বিপ্লবী বীর বাঘা যতীনের ভাস্কর্যের উপর হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যের পর এবার বাঘা যতীনের ভাস্কর্যের ওপর হামলা একই সূত্রে গাঁথা। হামলাকারীদের কোন ছাড় নেই। পুলিশ সুপারকে বলেছি যে কোন মূল্যে এদের আইনের আওতায় আনতে হবে। পুলিশের অভিযান চলছে।’
তিনি কুষ্টিয়ার সর্বস্তরের মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে ধর্মান্ধ মৌলবাদ জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যের বিকল্প নেই বলেও জানান এই আওয়ামী লীগ নেতা।