আব্দুর রহমান : কুষ্টিয়ার জেলার বিভিন্ন গ্রামের বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে এখন শুধুই হলুদের সমারোহ। তবে মৌসুমের শুরুতে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবার সরিষার ফলন ভাল হবে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে কুষ্টিয়ায় সরিষা চাষের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছিল সাত হাজার ৭৭৫ হেক্টর। তবে চাষ হয়েছে পাঁচ হাজার ৫৩০ হেক্টর। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১৯৬০ হেক্টর, খোকসা উপজেলায় ১৫৭ হেক্টর, কুমারখালী উপজেলায় ৮২০ হেক্টর, মিরপুর উপজেলায় ৫৫০ হেক্টর, ভেড়ামারা উপজেলায় ২৫০ হেক্টর ও দৌলতপুর উপজেলায় ১৭৯৩ হেক্টর সরিসার চাষ করা হয়েছে।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার আলামপুর ইউনিয়নের কাথুলিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল হক বলেন, চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সরিষার বাম্পার ফলন হবে। চলতি বছর প্রায় ২ একর জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষা আবাদ করেছেন তিনি আশা করছেন ভালো ফলন পাবেন। কৃষক আব্দুল হকের মত কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের বালিয়াপাড়া গ্রামের মিন্টু, সাইফুল, আশকর, আইয়ুব আলী, আমির সহ একাধিক কৃষক ভালো ফলন ও ভালো দামও পাবেন বলে আশা করছেন। কৃষক একব্বার বলেন, এবার আবহাওয়া ভাল থাকায় সরিষায় কোন রোগ-বালায় ছিল কম। বিশেষ করে বারি ১৪, ১৭, ১৮ ও বিনা ৯ জাতের সরিষায় রেকর্ড পরিমান উৎপাদন হবে। প্রতি বিঘায় গড়ে ৪ থেকে ৫ মণ ফলন হয় এবার সেখানে প্রায় ৭ মণের কাছে ফলন পাবেন বলে প্রতিবেদককে জানান। তারা এটাও বলে আর কিছুদিন পরেই সরিষা কর্তন করে একই জমিতে বোরো আবাদের প্রস্তুতি নিবেন।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, মৌসুমের শুরুতে অনুকুল আবহাওয়ার কারণে গত বছরের চেয়ে এবার সরিষা চাষ বেশ অনেকটা বেড়েছে। স্থানীয় জাতের সরিষায় হেক্টও প্রতি ফলন হয় ৫.৬ টন। সে তুলনায় বিনা ও বারিসহ উচ্চফলনশীল জাতের সরিষার ফলন হয় হেক্টর প্রতি দেড় থেকে দুই টন। উচ্চ ফলনশীন জাতের সরিসা চাষে কৃষকদের ব্যাপকভাবে উদ্বুদ্ধ করায় এ বছরও চাষ বেশি হয়েছে।
কুষ্টিয়া জেলার উপ পরিচালক ড. হায়াত মাহমুদ জানান, এবার প্রতি বিঘায় প্রায় ৭মণের কাছাকাছি সরিষার ফলন হবে। যারা বেশি যত্ম করেছেন তাদের ফলন অন্যদের তুলনায় বেশি হবে বলে মন্তব্য করেন। সরকার থেকে এবার বীজ ও সার দেওয়ায় কৃষকদের তেমন কোন খরচ করতে হয়নি। নাম মাত্র খরচে কৃষকরা ভাল লাভ করতে পারবেন। একই সাথে সরিষার উৎপাদন বাড়ায় বাজারে সয়াবিনসহ অন্য তেলের ওপর এবার চাপ কমবে বলে মনে করেন তিনি। চলতি বছর জেলায় ২৫ হাজার কৃষকদের বীজ ও সার প্রণোদনা দেওয়া হয় কৃষি বিভাগ থেকে। গত বছর মাত্র ৫ হাজার জনকে এ সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও সরিষা উৎপাদন বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিতে বলে কৃষি বিভাগকে। কুষ্টিয়ায় গতবারের তুলনায় এবার প্রায় ৪০ ভাগ বেশি সরিষার আবাদ হয়েছে।