বিগত কয়েক বছর ধরেই কুষ্টিয়া পৌরসভার বিভিন্ন কর্মকান্ডের দুর্নীতি নিয়ে কুষ্টিয়া স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যম, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়াতে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয়। ঐ সকল দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশের পরেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে কয়েক মাস ধরেই পৌরসভার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের দুর্নীতি বিষয়ে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয়, যার প্রেক্ষিতে পৌর কর্তৃপক্ষ দুইজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এই ধরণের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
হঠাৎ করেই এপ্রিল মাসের শেষের দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভেসে আসে দুর্নীতি এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে কুষ্টিয়া পৌরসভার কর নির্ধারক আমান উল্লাহকে বরখাস্ত এবং নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলামকে ওএসডি করেছে পৌর কর্তৃপক্ষ। কুষ্টিয়া শহর জুড়ে উক্ত দুজনকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ ও কিছু অনলাইনে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর তোড়পাড় শুরু হওয়ার একদিনের মাথায় সবকিছু থেমে যায়। রিমুভ করা হয় উক্ত দুজন ব্যক্তির সমস্ত সংবাদ। তবে এখন পর্যন্ত তারা ওএসডি ও বরখাস্ত হয়ে আছেন পৌরসভা থেকে জানা গেছে।
বিষয়টি নিয়ে সাধারণ জনগণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। কেনই বা সংবাদ প্রকাশ করা হল আবার কেনইবা সংবাদ গুলো রিমুভ করা হলো। সামাজিক যোগাযোগের এ বিষয়টি নিয়ে নানা ধরনের নীতিবাচক মন্তব্য দেখা যায়। সর্বপ্রথমে Kohenur Islam নামের এক ফেসবুক আইডি পোস্ট করা হয়।
“ব্রেকিং নিউজ…..
দুর্নীতি এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে কুষ্টিয়া পৌরসভার কর নির্ধারক কর্মকর্তা আমান উল্লাহ বরখাস্ত এবং নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলামকে ও.এস.ডি করেছে পৌর কর্তৃপক্ষ।” এরপর ১ ঘন্টায় ৬টি কমেন্ট আসে। কমেন্ট গুলো তুলে ধরা হলো।
Mahmud hasan নামের এক ফেসবুক আইডি থেকে কমেন্ট করেছেন মশায়ের ভাগে হয়তো কম পড়েছে তাই এই অবস্থা, Faisal Ahmed লিখেছেন অভিনন্দন, Tonmoy Ananta লিখেছেন কি খবর শুনায়লা, Sazzad mostofa লিখেছেন আমানুর রহমান আমান দূর্নিতি পরিধিতে চুনোপুটি, নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম দূর্নিতির মহাসাগর। হাউজিং ডি ব্লকে আলিশান ৬ তলা বাড়ি, ব্যাংক ব্যালেন্স, নামে বেনামে কোটি কোটি টাকা দূদক কি করে এটি কুষ্টিয়া বাসীর প্রশ্ম? Majedul haque Islam লিখেছেন জুতার মালা দেবো কি? Anwarul islam লিখেছেন ইন্জিয়ার সাহেবের ছোটো বেলার ছবি মনে হচ্ছে 🤔।”
এদিকে কুষ্টিয়া পৌরসভার পৌর স্বার্থ বিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে পৌর কর্তৃপক্ষ পৌরসভা কর নির্ধারক আমান উল্লাহকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। এ ব্যাপারে আমান উল্লাহর সাথে মুঠো ফোনে কথা বললে, তিনি জানান আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলামের কর্মকান্ড সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে ১৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মীর রেজাউল ইসলাম বাবু প্রতিবেদককে জানান, দুর্নীতির দায়ে কর নির্ধারক আমান উল্লাহকে সাময়িক বরখাস্ত ও নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলামকে ওএসডি করেছে পৌর কর্তৃপক্ষ। দুর্নীতিবাজ দুজনের বিষয়ে কুষ্টিয়া পৌরসভার সচিব কামাল উদ্দিনের ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নাই।
তবে এই দুইজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে গত একমাস ধরে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে যে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে তাতে দেখা গেছে এই দুজন ব্যক্তিই কুষ্টিয়া পৌরসভা চাকরি করে অঢেল সম্পত্তির মালিক বনে গেছেন। বিশেষ করে ইঞ্জিনিয়ার রবিউল ইসলাম পৌরসভার নীতিবহির্ভূত কর্মকাণ্ড সঙ্গে যুক্ত হয়ে অবৈধ পন্থায় অর্থ উপার্জন করে নামে-বেনামে বিভিন্ন ব্যাংকে গচ্ছিত রেখেছে অঢেল সম্পদ ও ক্রয় করেছেন লক্ষ লক্ষ টাকার এফডিআর। কুষ্টিয়া শহরের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি সম্পত্তি ক্রয় করে রেখেছেন তিনি। শহরের বুকে হাউজিং ডি ব্লকে ৬তলা ভবন নির্মাণ করেছেন। ইঞ্জিনিয়ার রবিউল ইসলাম তার নিজ এলাকায় গড়ে তুলেছেন আলিশান বাড়ি ও মাঠান জমি ক্রয় করে রেখেছেন বলে একটি গোপন সূত্র প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
শুধু এই দুইজন ব্যক্তি নয় কুষ্টিয়া পৌরসভাতে আরো একাধিক কর্মচারী ও কর্মকর্তা রয়েছে তারাও দুর্নীতির দায়ে জর্জরিত একের পর এক দুর্নীতি করে পার পেয়ে যাচ্ছেন তারা। সম্প্রতি এনএস রোডে পৌর কর্তৃপক্ষ যে আলোকসজ্জা করেছিলেন তা কয়েক মাসের মধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে। এর কারণ জানতে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পৌরসভার দুজন কর্মকর্তা ও বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর জানান, পুকুরচুরি করে কাজ করলে তো এটা হবেই সব অর্থই ডুকেছে ইঞ্জিনিয়ারদের প্রকেটে।
উক্ত দুজনের বিষয়ে কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র আনোয়ার আলীর সাথে মুঠো ফোনে কথা বললে, তিনি জানান, এটা পৌরসভার বিষয়। আমি কিছু বলতে পারবো না।