মেহেরপুর ও কুষ্টিয়া প্রতিনিধি ॥
অনিয়মই এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে মেহেরপুর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে। মেহেরপুর জেলার শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল আহসানের দুর্নীতি ও অনিয়ম কোনো ভাবেই বন্ধ হচ্ছে না। তিনি এখনো আওয়ামী শাসনামলের ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে চাকরী করে যাচ্ছে এবং আওয়ামীলীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগসাজশে অনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে দরপত্রের গোপন মূল্য বা রেট শিডিউল ফাঁস করে কমিশন বাণিজ্যের মাধ্যমে কাজ পাইয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল আহসানের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি গত ১১/০৯/২০২৫ তারিখে ফার্নিচার ক্রয়ের ওপেনিং টেন্ডারে ৭ গ্রুপের কাজ থাকলেও ১০ জন ঠিকাদার এই কাজে অংশগ্রহন করেন। কিন্তু এই দূর্ণীতিবাজ প্রকৌশলী রাকিবুল অনৈতিক সুবিধা নিয়ে ৫জন ঠিকাদের মাঝে ভাগ করে দেন। তিনি পিপিআর ২০০৬ ও ২০০৮ সালের নিয়ম ভঙ্গ করে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে ৫ জন ঠিকাদারদের কাজ দেন। উক্ত অফিস থেকে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে যে ৫ জন ঠিকাদারের সিমিলার না থাকায় পরবর্তীতে ভ’য়া কাগজপত্র তৈরী করে নিয়ে কাজ দিয়েছেন তিনি। এ বিষয়টি নিয়ে মেহেরপুরের সকল ঠিকাদারের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। অফিস ও ঠিকাদার সূত্রে জানা গেছে তিনি সপ্তাহে মাত্র দু’দিন অফিস করেন। অন্যদিকে অফিসের প্রতিটা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে খারাপ আচারন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এদিকে তার বিরুদ্ধে কাজের সময় বৃদ্ধি করতে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রধান প্রকৌশলীর নাম ভাঙিয়ে এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়া সহ কমিশনে টেন্ডার বাণিজ্যের অভিযোগ করেছে গাংনীর রানা নামের এক ঠিকাদার। এছাড়াও একাধিক ঠিকাদার জানান, নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল আহসান বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের আমল থেকে মেহেরপুরে কর্মরত রয়েছেন। দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে থাকার কারনে কতিপয় ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগসাজশে অনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে দরপত্রের গোপন মূল্য বা রেট শিডিউল ফাঁস করে কমিশন বাণিজ্যের মাধ্যমে কাজ পাইয়ে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। মেহেরেপুর কর্মরত থাকা অবস্থায় নানা অনিয়মের কারনে গত ১৬ অক্টোবর তাকে যশোরে বদলী করা হলেও তার অনিয়মের নানা চিত্র জানাজানি হলে তাকে যশোরেও যোগদান করতে দেয়নি স্থানীয় ঠিকাদাররা এমনকি তার যোগদান ঠেকাতে বিক্ষোভও করেছেন।
তিনি চাকুরিজীবনে নানা অনিয়মে জড়িয়ে নামে বেনামে বিপুল অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন বলেও জানা গেছে। বর্তমানে তিনি কতিপয় ফ্যাসিষ্ট ঠিকাদেরদের পূণ:বাসনে ব্যস্ত রয়েছেন বলে একাধিক প্রমানও পাওয়া গেছে। রাজশাহীতে বাড়ী হওয়ার সুবাদে চাপাইনবাবগঞ্জে কর্মকালীন সময়ে আওয়ামীগের ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগসাজসে ইচ্ছেমতো টেন্ডার ভাগাভাগি করছেন। সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে তিনি কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য নিজেই ঠিকাদারদের মধ্যে কমিশনের টেন্ডার আহ্বান করেন। তাকে যে ঠিকাদার সর্বোচ্চ কমিশন দিতে চান, নানা ফন্দি ফিকির করে তিনি তাকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। আওয়ামী শাসনামলে তাকে পানিশমেন্ট স্বরুপ মেহেরপুরে ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ সালে বদলী করেন উর্ধতন কর্তৃপক্ষ। তারও আরেকটি কারন আছে, সেটি হল রাজশাহীর স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ার সুবাদে বিগত কয়েক বছরে চাপাইনবাবগঞ্জে সিন্ডিকেট গড়ে তুলে প্রচুর অবৈধ সম্পদের মালিক বনে যাওয়ায় প্রকৌশলী রাকিবুল আহসান ও তার স্ত্রীর নামে অবৈধ সম্পদের সন্ধান পান দূর্ণীতি দমন কমিশন যার প্রেক্ষিতে তাদের দুজনের নামেই রাজশাহী দুদক তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন। গত দুই বছরে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোষর হয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিপ্তরকে অনিয়ম ও দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য বানিয়েছেন তিনি।
তার বিষয়ে ঠিকাদার আনোয়ার হোসেন সহ একাধিক ঠিকাদার বলেন, নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল আহসান যোগদানের পর থেকে ঠিকাদারদের জিম্মি করে বিপুল পরিমান টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
অন্যদিকে গত ০৮ সেপ্টেম্বর শিক্ষা প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে ৩টি দরপত্র আহ্বান করেন এই নির্বাহী প্রকৌশলী, দরপত্রে আইন বর্হিভূত, মনগড়া, কাল্পনিক ভাবে দরপত্র মূল্যায়নের নির্ণয়ক ধার্য করেন। উক্ত দরপত্রের সকল শর্ত পূরণ করার পর একমাত্র কাজ পাওয়ার যোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে মনোনিত হলেও উক্ত ঠিকাদারকে সে কাজ দেওয়া হয়নি। তিনি আইন বর্হিভূতভাবে নিজের মনগড়া দরপত্র মূল্যায়ন করছেন এবং দরপত্রের শর্তপূরণ ছাড়াই অন্য প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে সুবিধা নিয়ে তাদেরকে কাজ পাইয়ে দিয়েছেন। যার প্রেক্ষিতে ১৩ই অক্টোবর ঐ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তার বিরুদ্ধে সিপিটিইউ এর আদর্শ দলিলে ই,পি ডাব্লউিটু, এ সিভি, পিপিআর ২০০৬ ও ২০০৮ এর দরপত্র মূল্যায়নে এমন কোন নির্ণয়ক উল্লেখ না থাকা সত্ত্বেও তিনি মনগড়া নির্নয়ক উল্লেখ করেছেন এর কারনে উক্ত ঠিকাদার ব্যবসায়িক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। পিপিআর ২০০৬ ও ২০০৮ সালের নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগ তুলে আইনজীবীর মাধ্যমে উক্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল আহসানের বিরুদ্ধে। নোটিশ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের নিকট সকল তথ্য ও দলিলপত্র সংরক্ষিত আছে মর্মে জানিয়েছেন আইনজীবীর মাধ্যমে, অনিয়ম করে যা করা হয়েছে তা বাতিল করা না হলে বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তারা বাধ্য হবেন। এদিকে সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবি মোঃ রেজাউল করীম বলেন, তার মক্কেলকে নানা ভাবে ক্ষত্রিগ্রস্থ করা হয়েছে এ কারনে তিনি লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে প্রকৌশলী রাকিবুল আহসানের কাছে সার্বিক বিষয় জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, একজন ঠিকাদার আমাকে লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছেন, তিনি তা দিতেই পারেন। তবে তার বিরুদ্ধে অন্যান্য অভিযোগের বিষয় অস্বীকার করেন।