দেশে টিকার প্রথম ডোজ পাওয়া অনেক মানুষই দ্বিতীয় ডোজ সঠিক সময়ে পাওয়া নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। কারণ টিকার মজুদ ফুরিয়ে আসা এবং নতুন টিকার চালান এসে না পৌঁছনোর জন্য টিকার প্রথম ডোজ পাওয়া অনেক মানুষই দ্বিতীয় ডোজ সঠিক সময়ে পাবেন কি না, কিংবা আদৌ পাবেন কি না- তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সূত্র: বিবিসি বাংলা
শনিবার শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, অনেকের দ্বিতীয় ডোজের নির্ধারিত তারিখ থাকার পরেও তারা টিকা নেয়ার এসএমএস পাননি। যে কারণে তারা টিকা নিতে পারেননি। ১৩ লাখের বেশি মানুষ দ্বিতীয় ডোজ পাওয়া নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন পর্যন্ত প্রথম ডোজ ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৮৫৪ জন পেয়েছেন। আর দ্বিতীয় ডোজ টিকা ৩৩ লাখ ১৩ হাজার ৮২৪ জন পেয়েছেন। প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৯১ লাখ ৩৩ হাজার ২৭৮ ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে।
তবে শুক্রবার পর্যন্ত প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন, কিন্তু দ্বিতীয় ডোজের টিকা পাননি- এরকম মানুষ রয়েছেন ২৫ লাখ ৬ হাজার ৩০ জন। অর্থাৎ ১৩ লাখের বেশি মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় দ্বিতীয় ডোজের টিকাই এই মুহূর্তে সরকারের হাতে নেই।
প্রথম ডোজ নেয়ার কত দিনের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে- এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সৌমিয়া সোয়ামিনাথান বলেন, অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের ১২ সপ্তাহ (তিন মাস) পর্যন্ত সময়সীমা বৃদ্ধির উদাহরণ রয়েছে। ফলে আরো বেশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয় বলে বলা হচ্ছে। আর টিকার ক্ষেত্রে দুইটি ডোজ নেয়া গুরুত্বপূর্ণ। সেক্ষেত্রে যদি কয়েকদিন বা কয়েক সপ্তাহ দেরিও হয় তারপরেও দ্বিতীয় ডোজ নেয়া দরকার। কারণ প্রথম ডোজে আসলে নতুন অ্যান্টিজেন শরীরের ভেতর প্রবেশ করে। আর দ্বিতীয় ডোজের মাধ্যমে সেটার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়া হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বুলেটিনের অন্যতম মুখপাত্র অধ্যাপক রোবেদ আমিন বলেন, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা প্রথম ডোজের পর ১২ সপ্তাহ, এমনকি তারপরেও দ্বিতীয় ডোজ নেয়া যেতে পারে। ফলে দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে ভয়ের কোন কারণ নেই।
যারা কোভিশিল্ড নিয়েছেন, তারা কি অন্য টিকা নিতে পারবেন- এ বিষয়ে ড. সৌমিয়া সোয়ামিনাথান বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞানও পরিবর্তিত হচ্ছে। এখন বিশ্বে যেসব ট্রায়াল চলছে, সেখানে দুই ধরনের দুইটি টিকা নেয়ার পরীক্ষাও করা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত দুই কোম্পানির দুই ডোজ টিকা নেয়ার ব্যাপারে সুপারিশ করার মতো পর্যাপ্ত তথ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হাতে নেই। তবে এখন পর্যন্ত এটাই সুপারিশ করা হচ্ছে যে, যারা প্রথম ডোজ যে টিকা নিয়েছেন, দ্বিতীয় ডোজও সেটা নেবেন।
এদিকে দুই কোম্পানির দুইটি আলাদা ডোজ নেয়ার বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছে বাংলাদেশের করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গঠিত বিশেষজ্ঞদের পরামর্শক কমিটি।
এবিষয়ে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান বলেন, বিশেষজ্ঞ কমিটি এক টিকার সঙ্গে অন্য টিকা নেয়ার বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন। ফলে যারা কোভিশিল্ড পেয়েছেন, তারা সেটাই পাবেন।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ সরকার অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ড বাংলাদেশে দেয়ার জন্য ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউটের সঙ্গে বেক্সিমকোর মাধ্যমে চুক্তি করেছিল। ছয়মাসের মধ্যে তিন কোটি টিকা আনার চুক্তি হয়েছিল। গত জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাসে ভারত থেকে দুই চালানে ৭০ লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশ পেয়েছে। এছাড়া ভারত সরকারের উপহার হিসাবে দিয়েছে ৩২ লাখ ডোজ। সবমিলিয়ে এক কোটি দুই লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশ হাতে পেয়েছে। সিরাম ইন্সটিটিউটের সাথে চুক্তি অনুযায়ী প্রতিমাসে ৫০ লাখ ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা বাংলাদেশে আসার কথা ছিলো। কিন্তু গত দুই মাসে কোন চালান আসেনি।