রেদোয়ানুল হক সবুজ :
কুষ্টিয়া গণপূর্ত অফিসের চেয়ারে বসেই উপ-সহকারী প্রকৌশলী অনুপ কুমার সাহার ধুমপান করার ভিডিও সোসাল মিডিয়ায় ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়েছে। অন্যদিকে তিনি আ’লীগ সরকারের ১৭ বছর এই অফিসেই কর্মরত আছেন। কুষ্টিয়ার সাবেক এমপি হানিফ ও সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আতার মদদপুষ্ট থাকার কারনে বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে গোপনে কাজ করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। হানিফ আতার মদদপুষ্ট হওয়ার কারনে তিনি আওয়ামীলীগের ১৭ বছরের শাসন আমলে অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। কতখানি ক্ষমতার দাপট থাকলে এখরো একই অফিসে চাকরী করতে পারেন। শুধু অনুপ কুমারই নয় গনপূর্ত অফিসে তার মত আরো একাধিক আওয়ামী দোষররা এখনো বহাল তবিয়তে চাকরীর পাশাপাশি আ’লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। তিনি কুষ্টিয়া পৌর ৯ নং ওয়ার্ডের দত্তপাড়া এলাকার মৃত অসিত সাহার ছেলে। বাবা মুক্তিযোদ্ধা থাকায় সহজে মিলে গেছে গণপূর্তের চাকরি। চাকরী পাওয়ার পর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। আওয়ামী লীগের মিছিল মিটিং এ তার উপস্থিত ছিলো নিয়মিত। যে কারণে তার বিরুদ্ধে কমিশন বাণিজ্য সহ নানান অভিযোগ থাকলেও মুখ খুলতে সাহস পেতেন না কুষ্টিয়া গণপূর্ত অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। অফিসেও তারা চলাফেরা ছিলো সিনেমার ডনের মত। অফিসের চেয়ারে বসেই সকলের সামনেই তিনি ধুমপান করতেন এখনো করে যাচ্ছেন।
আ’লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় কুষ্টিয়া থেকে মাগুরাতে পোস্টিং হলেও তিন মাসের ব্যবধানে পুনরায় কুষ্টিয়াতে পোস্টিং নিয়ে চলে আসেন। এই কর্মকর্তা সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সে এবং তার পূর্ব পুরুষেদের বসবাস ছিলো মাটির ঘরে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে তার ভাগ্যের চাঁকা ঘুরেও যায়। তার ভাগ্য পরিবর্তনের মূলে ছিলো আওয়ামী লীগের বড়-বড় নেতা এবং গণপূর্তের অধীনন্থ ঠিকাদারদের সাথে সক্ষতা। প্রাপ্ত তথ্য মতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুষ্টিয়া পৌরসভার আড়ুয়াপাড়ার দত্ত পাড়া গলিতে তার রয়েছে অধুনা নামের একটি ৪ তলা বিশিষ্ট বাড়ি, ইসকন মন্দিরের পাশে ৪ কাঠা জমি, কুষ্টিয়া পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় তার রয়েছে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের একাধিক ফ্লাট, একটি ২৮ লক্ষ টাকার প্রাইভেট গাড়ি এবং ৩টা দশ চাকার ট্রাক। অন্যদিকে গাজীপুরে তার শ্বশুরবাড়ী এলকাতেও তার নামে অথবা বে-নামে রয়েছে অঢেল সম্পত্তি। যা নিয়ে তার এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে রীতিমত জল্পনা কল্পনা চলছে। তবে এলকাবাসীর ধারণা তার দৃশ্যমান সম্পদের চেয়েও কয়েকগুণ বেশী রয়েছে গোপনে ক্রয়কৃত সম্পদ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার এক প্রতিবেশী জানান, অনুপ কুমার সাহাকে আমি ছোট বেলা থেকেই চিনি। তার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। অগ্রণী ব্যাংকের একাউন্ট্যান্ট হিসেবে চাকরি করতেন। মুক্তিযোদ্ধার কোটায় অনুপের চাকরি হয়। আমি জানি সে গণপূর্ত অফিসে উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্বে আছেন। তারা একসময় মাটির ঘওে বসবাস ছিল। অনুপের বাবা ১৯৯৮ সালের দিকে ব্যাংকের চাকরি থাকাকালীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
অপর অরেক প্রতিবেশী জানান, একজন গণপূর্তের উপ-সহকারী প্রকৌশলী বৈধভাবে এত টাকা এবং সম্পদের মালিক হতে পারে না। অবশ্যই সে অবৈধ আয়ের টাকা দিয়ে সম্পদের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। তার টাকা এবং রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে দুদক বা সরকারের অনান্য সংস্থা তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নাই। তবে এখন যদি দুদক তার সম্পদের অনুসন্ধান করে তাহলে তার সম্পদের উৎস বের হয়ে আসবে।
সরেজমিনে অনুপ কুমার সাহার সাথে গত দু’দিন ধরে তার অফিসে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি, অফিসের গোপন সূত্রে জানা গেছে তিনি এখানো হানিফ আতার নির্দেশে ‘র’ এর এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে চলেছেন এজন্য ইদানিং সে অফিসে বেশী সময় দেন না।
এদিকে কুষ্টিয়া গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ নুরুজ্জামান হোসেন জহিরের মুঠোফোনে অনুপের চেম্বারের নিজ চেয়ারে বসে ধুমপান, ১৮ বছর একই অফিসে কিভাবে চাকরি ও তার সার্বিক দূর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ উপার্জনের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোন সদোত্তর দিতে পারেন নাই। অবশেষে তিনি বলেন, আমি মিটিংএ আছি আপনার সাথে পরে কথা বলব বলে লাইন কেটে দেন।
/কে এম শাহীন রেজা/