ছিলেন দুর্দান্ত প্রতাপশালী ছাত্রনেতা। এরপর আকস্মিকভাবে প্রবাসজীবন বেছে নিলেন। এখন লন্ডনেই থিতু হয়েছেন সিদ্দিকী নাজমুল আলম। প্রবাস থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় দারুণ সক্রিয় নাজমুল। গতকাল ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করেছেন। যেখানে প্রিয় মানুষটিও এসেছেন ফ্রেমে। আর এই ছবি পোস্ট করেই নাজমুল লিখেছেন, ‘আমার তোলা সেরা সেলফি গত বছরে।’
নাজমুলের এই সেরা ছবির নেপথ্যে তেমন কোনো রহস্য নেই। নিজের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে নাজমুল বেশ কিছুদিন আগে অনেক বড় একটি লেখা লিখেছিলেন। সেই লেখায় উঠেছিল তার ছাত্রজীবন ও নিজের সম্পর্ক নিয়ে। নাজমুল লিখেছিলেন, ‘প্রত্যেকটি মানুষের জীবনেই কিছু ব্যক্তিগত কাহিনি থাকে, তবে রাজনীতি যারা করে তাদের ব্যক্তিগত বলে কিছুই আর থাকে না। হ্যাঁ, আমিও ব্যক্তিগত জীবনে স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়- অর্থাৎ ছাত্রজীবনে একাধিকবার প্রেমে জড়িয়েছিলাম। হয়তো আমি যোগ্য ছিলাম না কিংবা আমার সঙ্গে মতের মিল হচ্ছিল না এ জন্য প্রেমের সম্পর্কের পরিসমাপ্তি ঘটেছিল। প্রেমের সব সম্পর্কই বিয়ে পর্যন্ত গড়ায় না; হয়তো আমার ক্ষেত্রেও গড়ায়নি। বিধাতা যাকে যার কপালে রেখেছে, জীবনসঙ্গী হিসেবে তার সাথেই তার বন্ধন হবে। মানুষ ২০ বছর সংসার করার পরও সংসার ভেঙে যায় সুতরাং ভাগ্য লাগে। শেষ পর্যন্ত কলেজজীবনে যাকে ভালোবাসার কথা কোনো দিন মুখ ফুটে বলতে সাহস পাইনি আল্লাহ অনেক পরে সব ব্যর্থতার অবসান ঘটিয়ে তাকে আমার জীবনসঙ্গী হিসেবে উপহার দিয়েছে।’
অর্থাৎ সেলফির মানুষটি সম্পর্কে আর বলার কিছুই বাকি থাকে না। নাজমুলের এই ছবিটি নেটিজেনদের মধ্যে বেশ ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। সবাই শুভেচ্ছা, ভালোবাসা জানিয়েছেন নাজমুলের এই যুগল ছবিতে ভালোবাসার ইমোজি দিয়েও ভরিয়ে দিয়েছেন।
নিজের স্ত্রী সম্পর্কে বলতে গিয়ে অনেক বড় একটি লেখা লিখেছেন। নাজমুল বলেন, আমরা একে অপরকে ভালোবাসি সব কিছুর ঊর্ধ্বে উঠে। রাজনীতির পদবি বাঁচাতে গিয়ে যারা ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে করেছে, খোঁজ নিয়ে দেখুন কেউ ব্যক্তিগত জীবনে ভালো নেই, হয়তো তাদের পদবি আছে, ধন-সম্পদ আছে; কিন্তু শান্তিটা নেই। তাই আমি বেছে নিয়েছি শান্তির পথ। হ্যাঁ, পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী স্বামী যদি কেউ থাকে সেটা আমি, পৃথিবীর সবচেয়ে কোনো সুখী বাবা যদি থাকে সেটা আমি। এবং আমি অনেক সৌভাগ্যবান যে আমার ছাত্রজীবনের না বলা ভালোবাসাকে আমি আমার জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়েছি।
ব্যক্তিগত কাহিনি ফেসবুকে বলতে চাইনি। বলতে বাধ্য হচ্ছি, অনেকের কৌতূহলের কারণে। কিছুদিন আগে কেউ আমার স্ত্রীর অতীতের কিছু ছবি দিয়ে আমার মেয়ের জন্মদিনে টিপ্পনি কেটেছেন, তাতে আমার যদিও কিছু যায়-আসে না। হ্যাঁ, আমার স্ত্রীর অতীতে সংসার হয়েছিল; কিন্তু যেকোনো কারণে সেটা টেকেনি। এবং আমি সব জেনেশুনেই তাকে বিয়ে করেছি। ঠিক তেমনি, তাকেও আমি জীবনের সব প্রেমের এবং প্রেমিকাদের কথা খোলাসা করে বলেই আমরা বিয়ে করেছি। এবং আমি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি যে আমাকে আল্লাহ এত ভালো একজন মানুষকে জীবনসঙ্গী হিসেবে উপহার দিয়েছেন, বিকজ আই নেভার ডিজার্ভ হার (আমার স্ত্রী কে)।
আমরা আমাদের বিবাহিত জীবনে সুখী। আমি প্রাউড ফিল করি আমার স্ত্রী-কন্যার জন্য যে তারা আমার জীবনের জন্য আশীর্বাদ। আমার স্ত্রী আমার জীবনের সেরা বন্ধু, তেমনিভাবে আমিও তার সেরা বন্ধু। আমাদের হয়তো জৌলুস কিংবা চাকচিক্য নেই, তবে আছে অনাবিল সুখ। সাত-আট কিংবা ১২ বছর আগের প্রেমসংক্রান্ত কিছুই মনে রাখতে চাই না আর যারা ক্ষতি করার আশায় কারো দ্বারা প্ররোচিত হয়ে নোংরামিগুলো করছেন, আপনাদের জন্য করুণা। সুখী হয়ে সবাই যেমন জন্মগ্রহণ করে না, ঠিক তেমনভাবে সুখ খুঁজে বের করে নিতে হয়। ১৬ বছর আগের হারিয়ে যাওয়া বন্ধুটিই যে আমার সুখের কেন্দ্রস্থল ছিল, তা জল এত দূর না গড়ালে জানতামই না। আমার সুখ আমাকেই খুঁজে বের করতে হয়েছে।
আমার স্ত্রীর নাম সিদ্দিকী ফারসিনা হোসেন এবং আমার কন্যার নাম সিদ্দিকী মাহ্ভীন আলম। যারা আমাকে স্নেহ করেন, ভালোবাসেন, সম্মান করেন, বড়-ছোট সবার কাছেই আমি আমার পরিবারের জন্য দোয়া চাই। আমি ভীষণ ক্লান্ত হয়ে গেছি, শুধু আঘাত ঠেকাতে ঠেকাতে। কখনো রাজনৈতিক, কখনো সামাজিক, কখনো গুজব, কখনো ব্যক্তিগত আক্রমণ প্রতিনিয়ত করেই যাচ্ছেন কেউ কেউ। আল্লাহ আপনাদের সুমতি দান করুন।