কুষ্টিয়া ভেড়ামারা উপজেলার বাহিরচর এলাকার জিন্নাত আলী ১০ বছরের মাথায় আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ। এ যেন আলাদীনের চেরাগ পেয়েছেন জিন্নাত আলী। স্থানীয় নেতাদের নাম ভাঙিয়ে নদীর জায়গা দখল, এলাকার অসহায়দের কাছ থেকে জোড় পূর্বক জমি দখল, নদী থেকে অবৈধভাবে পলি মাটি উত্তোলন ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, পাথর ভাঙ্গানো মেশিনের আড়ালে অবৈধ ফার্নেস অয়েল এর কারখানাসহ নানা অপকর্মের মূলহোতা জিন্নাত আলী।
তার এ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অঞ্চলের পুরোপুরি তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে সবসময় পাহারা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং প্রশাসন এর চোখের আড়ালে নদীপথে বিভিন্ন অবৈধ মালামাল চোরাচালান ও প্রতিটি নৌকা ও ট্রলারকে তার একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদা টাকা দিয়ে নদী পার করতে হয় বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন। দক্ষিণ বাহিরচরের বারো মাইলের সহজ-সরল মানুষদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি, চাঁদাবাজি, জাল দলিল দিয়ে জমি দখল, প্রতারণাসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ উঠেছে মোঃ জিন্নাত আলী নামে ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, স¤প্রতি ক্ষমতাসীন দলের কিছু ব্যক্তির সাথে পরিচয় হয়ে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। এলাকায় তিনি এক মূর্তিমান আতঙ্ক। ভয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না। একাধিক ভুক্তভোগীরে সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এস আর অক্রিজেন প্লান্ট লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ জিন্নাত আলী এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। তার ভিজিটিং কার্ডে এস আর অক্রিজেন এর ওয়েবসাইটের ঠিকানা দেওয়া থাকলেও তার কোন হদীস মেলেনি। স্থানীয়রা বলছেন নিজের অপকর্ম ঢাকতে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের নাম ভাঙিয়ে চলছে দিনের পর দিন। তার এই ভাটার এরিয়ার মধ্যে এমন কোন অপকর্ম হয় না বলে অভিযোগ উঠেছে। ভাটার এরিয়ার মধ্যে বিলাশবহুল ভবন রয়েছে আর এই বিলাশবহুল ভবনের নিচতলায় গোপন কক্ষ রয়েছে। জিন্নাত আলীর ভাটার বিলাশবহুল ভবনের মধ্যে অনেক নেতার আনাগোনা রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সরজেমিনে যেয়ে দেখা যায়, পাথর ভাঙ্গার শ্রমিক ও বালু উত্তোলনের শ্রমিকের নামে আলাদা একটি কলোনী তৈরি করা আছে। যেখানে অধিক মেয়েদের আনাগোনা রয়েছে।
আর এই এরিয়ার মধ্যে কোন সাংবাদিক গেলে তাদের প্রবেশ নিষেধ। স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, এই এস আর ভাটার কলোনিতে বিভিন্ন ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপ হয়ে থাকে। জিন্নাত আলীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এই এরিয়ার মধ্যে ঘুরতে পারবেন কিন্তু কোন ছবি তুলতে পারবেন না। এবং তিনি আরো বলেন আমি গত ১৫ বছরের মধ্যে শত কোটি টাকার মালিক হয়েছি। তিনি হুমকি দিয়েই বলেন আমার নামে কোন সাংবাদিক কোন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করতে পারে না। এখন জনমনে প্রশ্ন? তাহলে এই ভাটা এরিয়ার মধ্যে কি হয়? আর এত টাকার উৎস কোথা থেকে? আর সাংবাদিকরা কেন তার অবৈধ সম্পত্তির সংবাদ প্রকাশ করতে পারবে না। জিন্নাত আলীর ভাষ্যমতে ভেড়ামারা টিকটিকি পাড়াতে একটি বাড়ি আছে এবং কুষ্টিয়া শহরে কয়েকটি বিলাশবহুল বাড়ি ও গাড়ি রয়েছে। এবং সারা বাংলাদেশে বিভিন্ন জায়গায় চোরাচালানসহ এই অবৈধ ব্যবসার অন্তরালে পাথর, বালু, ইট সরকারি কাজে সরবরাহ করেন। এবং তার সাথে যখন কথা বললে তিনি এমপি-মন্ত্রীসহ বড় বড় নেতাদের সাথে তার পরিচয় বলে তিনি জানান।
সারা বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় নাকি তার হাত রয়েছে। এছাড়াও অবৈধভাবে তিনি একটি নতুন সিমেন্টের ইট তৈরির কারখানা ও এস আর অক্রিজেন প্লান্ট নামক অবৈধ কারখানায় তৈরি করছেন বিভিন্ন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নাম নাম ভাঙ্গিয়ে। দীর্ঘদিন যাবৎ ভাটার আড়ালে অবৈধ ব্যবসা করে যাচ্ছে এই বিএনপি নেতা। পুরো দক্ষিন বাহিরচর বারো মাইল এলাকা তার নিয়ন্ত্রণে। একের পর এক ভয়ংকর অপরাধ করলেও এলাকাবাসী প্রাণভয়ে নিশ্চুপ। আবার এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও কোনো ফল পাওয়া যায় না। জিন্নাত আলীর ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সাথে দহরম-মহরম সম্পর্ক। এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, জিন্নাত আলী ভয়ংকর গ্যাংয়ের সদস্য। তার ভাই ভাস্তে এ গ্যাংয়ের দলনেতা। ৩০ থেকে ৪০ জন উঠতি বয়সের কিশোর নিয়ে গ্যাংটি গঠিত। পুরো বারোমাইল এলাকার মাদকের স্পটগুলো নিয়ন্ত্রণ করে এই জিন্নাত বাহিনী। এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, গোটা এলাকা নিস্তব্ধ। এই এলাকায় কোন ঘটনা ঘটলে এই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায় না এলাকাবাসীরা। একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এই এলাকার মধ্যে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষেধ, শুধুমাত্র ভাটার কার্যক্রম যখন শুরু হয় তখন ভাটার কাজের সাথে সম্পৃক্ত লোকজন ছাড়া আর তাদের পরিচিত লোকজন ছাড়া জিন্নাত আলীর এই এরিয়ায় কেউ প্রবেশ করতে পারে না।
এই গ্র“পটি চুরি-ডাকাতি, মাদক ব্যবসা করেই ক্ষ্যান্ত থাকেনি, মাসে মাসে বিভিন্ন বাড়িতে চাঁদাবাজি করতো। চাঁদার পরিমাণ নির্ধারিত হতো কার বাড়িতে কত বিঘা সম্পত্তি রয়েছে তার ওপর। তাদের চাহিদা মোতাবেক চাঁদা না দিলে তাদেরকে উক্ত্যক্তসহ বিভিন্নভাবে নাজেহাল করে এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। ফলে অনেকই মুখ বুঝে তাদের অত্যাচার সহ্য করতো। অভিযোগ রয়েছে, এ বাহিনী এতটাই প্রতাপশালী যে প্রকাশ্যে কাউকে লাঞ্ছিত কিংবা অপমান করলেও কেউ এগিয়ে এসে প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। কিভাবে তিনি শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন বলে কুষ্টিয়ার সচেতন মহল প্রশাসনের ও দুদকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।