সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের নীলকণ্ঠপুর গ্রামের যুবক আবিদ হোসেন মোল্লা ওরফে বাবুকে নির্যাতন চালিয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত নিহতের স্ত্রী সাবিনা খাতুন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। বুধবার (০৪ নভেম্বর) বিকেলে সাতক্ষীরার বিচারিক হাকিম ইয়াসমিন নাহারের আদালতে এ জবানবন্দি দেন।
এর অগে পুলিশ সাবিনা খাতুনের দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী বুধবার ভোরে তার বাড়ির পাশ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত খেজুরের কাটা, হাতুড়ি, প্লাস, রক্তমাখা জামা, লুঙ্গি উদ্ধার করেছে। এদিকে, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মাগুরা জেলার শালিখা থানাধীন হাজরাহাটি তদন্ত কেন্দ্রে কর্মরত সাবিনা খাতুনের ভাই সিপাহী আরিফ হোসেনকে আটক করে সাতক্ষীরায় আনা হয়েছে।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, আট মাস আগে একই গ্রাম নীলকণ্ঠপুরের মুক্তিযোদ্ধা আরশাদ আলী মোড়লের মেয়ে দু’ সন্তানের জননী বিধবা সাবিনাকে বিয়ে করে ভাটা শ্রমিক আবিদ হোসেন মোল্লা ওরফে বাবু (২৭)। বিয়ের পর সে ভাটার কাজ ছেড়ে দিয়ে তার সৎ শ্যালক সন্ত্রাসী নুরুল মোড়লের সঙ্গে ঘুরে বেড়াতো। বাড়িতে যাওয়ার জন্য বাবা মা বললেও শ্বশুর বাড়িতে থাকতো বাবু। এরই মধ্যে সাবিনা মাগুরা জেলায় কর্মরত এক বিজিবি কর্মীর সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলে। এক পর্যায়ে সাবিনা, তার পুলিশ সদস্য ভাই আরিফ ও বোন শরীফা তাকে কাবিনের দেড় লাখ টাকা পরিশোধ করে তাকে তালাক দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। কিন্তু বাবু তার স্ত্রীকে তালাক দিতে রাজি না হওয়ায় তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। এক পর্যায়ে গত রোববার ৫ দিনের ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসে আরিফ। এরপর সোমবার রাতের কোন এক সময়ে নির্যাতন চালিয়ে হত্যার পর বাবুর গলায় ওড়না পেচিয়ে পার্শ্ববর্তী পুকুরপাড়ে লেবু গাছের ডালে ঝুলিয়ে আত্মহত্যার প্রচার দেওয়া হয়। মঙ্গলবার সকালেই আরিফ তার কর্মস্থলে যোগ দেয়। পুলিশ মঙ্গলবার দুপুরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাবিনাকে আটক করে।
এ ঘটনায় নিহতের মা হোসনে আরা খাতুন বাদি হয়ে আরিফ ও সাবিনাসহ ১০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৫ জনকে আসামী করে মঙ্গলবার রাতেই থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এদিকে, সাবিনা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তিনিসহ আরো চারজন এ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।
কালিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জিয়ারত আলী জানান, গ্রেপ্তারকৃত সাবিনা খাতুন তার স্বামীকে হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কথা উল্লেখ করে বুধবার বিকেলে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। তাকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। তবে সাবিনার ভাই মাগুরা জেলার শালিখা থানাধীন হাজরাহাটি তদন্ত কেন্দ্রে কর্মরত আরিফকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বুধবার থানায় আনা হয়েছে।