ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ৯নং মনোহরপুর ইউনিয়নের দামুকদিয়া গ্রামে যুবলীগ কর্মী হত্যাকান্ডের ঘটনায় ভাংচুর লুটপাটে নিরব দর্শকের ভূমিকায় পুলিশের অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে সচেতন মহল।
একটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ। গ্রামছাড়া শতাধিক পরিবারের মানুষের সীমাহীন দূর্ভোগের অন্ত নেই। দেখার কেউ নেই এমনকি স্থানীয় প্রশাসনের কোন প্রকার সহযোগিতা পাচ্ছেনা ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।গত ২৫ জুলাই ২০২১ মনোহরপুর ইউনিয়নের দামুকদিয়া গ্রামে রাতের আধারে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয় যুবলীগ কর্মী রাশেদুল ইসলাম ওরফে উকিল মৃধা (৪৫)। এ ঘটনায় ২৮ জনের নামসহ অজ্ঞাত আরো ৮/১০ জনকে আসামী করে মামলা করেন নিহতের স্ত্রী ইউপি সদস্য তানিয়া বেগম।
এজাহার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরেই মনোহরপুর ইউনিয়নে সামাজিক ও রাজনৈতিক দল ভাঙ্গনকে কেন্দ্র করে আওয়ামীলীগের দুই গ্রুপে বিবাদ চলে আসছিল। এরই জের ধরে ঘটনার দিন উভয় পক্ষের দ্বন্দ্ব নিরসনের লক্ষে শৈলকুপা থানায় সমঝোতার মিটিং থাকায় একপক্ষ হাজির না হওয়ায় আলোচনা স্থগিত থাকে। পরে রাত ৮টার দিকে বাড়ি ফেরার পথে দামুকদিয়া গ্রামে উকিল মৃধার উপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়। আহত উকিল মৃধাকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে শৈলকুপা হাসপাতালে নিয়ে আসলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বাদীর অভিযোগ, গ্রামের প্রতিপক্ষ গ্রুপ তার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। মনোহরপুর গ্রামের ইউপি সদস্য কাজী সেলিম রেজা জানান, তার ভাই উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাবেক সভাপতি কাজী মোস্তাফিজুর রহমান নওরোজ ও হাজরামিনা গ্রামের সাবেক উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি জাহিদুল ইসলাম শৈলকুপা থানায় মিটিংয়ে হাজির ছিল। তাদেরকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক মামলায় আসামী করা হয়েছে।
উল্লেখ্য হত্যাকান্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দামুকদিয়া, সীমান্ত বাজার, মনোহরপুর, মাধবপুর, লক্ষীপুর, হাজরামিনা, বিজুলিয়াসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রাম উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সরব হয়ে উঠেছে ইউনিয়ন ও উপজেলা আওয়ামীলীগের দুগ্রুপের রাজনৈতিক অঙ্গন। পুলিশের উপস্থিতিতেই মুহুর্তে লুটপাট হয়ে গেছে প্রায় অর্ধশত বাড়িঘরের মালামাল। গরু-ছাগল, ঘরের আসবাবপত্র, ফসলাদি লুটপাটের সাথে সাথে ভয়ভীতি দেখিয়ে বাড়ি ছাড়া করা হয়েছে বহু মানুষের। বাদ পড়েনি বৃদ্ধ, শিশু-কিশোর, স্কুল শিক্ষার্থীসহ গৃহবধুরাও।
দামুকদিয়া সীমান্তবাজার এলাকার বেশিরভাগ বাড়িতে এখন থমথমে ভাব বিরাজ করছে। ভুক্তভোগীরা জানান, পুলিশের উপস্থিতি থাকলেও থেমে নেই আসামীদের বাড়িঘর থেকে মালপত্র লুটপাট। এসব বাড়ির লোকজন তাড়িয়ে ঘরের ফসলাদি সমস্ত আসবাবপত্রের পাশাপাশি লুট হচ্ছে মাঠের ফসল। বাড়ি না ফিরতে আসামীপক্ষের চলছে হুমকি ধামকি ভয়ভীতি প্রদর্শন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বেশকিছু বাড়িতে ভাংচুর করা হয়েছে। গোয়ালের গরু, ক্ষেতের ফসলসহ লুট হয়েছে বিভিন্ন কৃষিপন্য। ঘরে থাকা শতশত মন পাট পিঁয়াজসহ গৃহস্থালী আসবাবপত্র সবই নিয়ে গেছে লুটেরা বাহিনী। বিরাণভূমির মত পড়ে থাকা দামুকদিয়া গ্রামের শতাধিক ঘরবাড়িতে জনমানবের চিহ্ন নেই, প্রতিপক্ষ লুটেরা বাহিনী নিয়ে গেছে খেতের ফসল, পুকুরের মাছ, বাগানের গাছসহ বাড়িঘরের আসবাবপত্র। সন্ধ্যা নামতেই বেড়ে যায় লুটেরাদের দৌরাত্ব।
অসহায় ভুক্তভোগিদের অভিযোগ শৈলকুপা পুলিশের সহযোগিতা না পেয়ে এখন আর কেউ পুলিশকে ফোন করেনা। তারা আরও অভিযোগ তুলে বলেন, ওসি জাহাঙ্গীর আলম শৈলকুপা যোগদানের পর থেকেই সাধারন জনগণকে অশালীন ভাষা আর খারাপ ব্যবহার করা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি, সুধিমহল এমনকি পুলিশ প্রশাসনের কর্মরতদের সাথেও তিনি খারাপ ব্যবহার করে থাকেন। নিয়মিত অফিস করেননা, তাৎনিক বিশেষ খবর পেলেও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেননা। এমনকি কোন এলাকায় দাঙ্গা হাঙ্গামার খবর পেলে মোবাইল ফোনে উভয়পক্ষকে ডেকে সালিশ ঘরে মিমাংসার চেষ্টা চালানোর অভিযোগ রয়েছে। এরই প্রতিফলন আজ দামুকদিয়া, ভাটবাড়িয়া, সেখেরপাড়া বাখরবা গ্রামের হত্যাকান্ড। এ বিষয়ে তারা ঝিনাইদহ পুলিশ সুপার ও খুলনা ডিআইজি মহোদয়ের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।