বৈশ্বিক করোণা মহামারীর দুঃসময়ে চাল সরবরাহ করেও দুই বছর অতিবাহিত হলেও কুষ্টিয়ার চালকল মিল মালিকদের জামানতের কোটি কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করাচ্ছেন ডিসি ফুড। এতে ব্যাপক লোকসানের মধ্যে পড়েছে মিল মালিকরা। যে কারণে ব্যাংকের দেনা পরিশোধও করতে পারছেন না তারা। বিষয়টি নিয়ে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসের কর্মকর্তা এস এম তাহসিনুল হক এর সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করলেও তার কোনো সুরাহা করেননি ঐ কর্মকর্তা। বিষয়টি নিয়ে মিল মালিকরা ফুঁসে উঠেছেন ফুড অফিসের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
তথ্যসূত্রে জানা গেছে তাদের জামানতের টাকা বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে ওই অসাধু কর্মকর্তা। এদিকে ঐসকল মিল মালিকরা ডিসি ফুড অফিসের অসাধু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বলেন, করোনাকালীন সময়ে অনেকেই ইরি বোরো ধানের চাল সরবরাহ করেছে, কিন্তু আংশিক ব্যক্তিরা চাল সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয় শুধুমাত্র দেশের বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে। কিন্তু ওই অসাধু অর্থ পিপাসু কর্মকর্তা ডিসি ফুড অনৈতিক সুবিধা নিয়ে কিছু ব্যক্তিদের জামানতের অর্থ ফেরত দিয়েছেন।
অন্যদিকে খাদ্য বিভাগ জানায়, ২০২০ সালের বোরো সংগ্রহ শুরু হওয়ার পর জেলার ৫৮০ জন মিল মালিক সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেন। এর মধ্যে মাত্র ১৬০ জন চাল দেন। বাকি ৪৬০ জন চাল দিতে ব্যর্থ হন। খাদ্য বিভাগ আরও জানায়, ১৬০ মিল মালিক চাল দেওয়ায় তাদের জামানত ফেরত দেওয়া হয়েছে। বাকি ৪৬০ জনের কেউ চালই দেননি। তাদের প্রায় দেড় কোটি টাকার কাছাকাছি জামানত আটকে আছে। এর মধ্যে যেসব মিল মালিক চুক্তির বিপরীতে ৫০ ভাগ ও ২৫ ভাগ চাল দিয়েছেন, তাদের আংশিক জামানত ফেরত দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে ফুড গোডাউনের শ্রমিকরাও দীর্ঘ আট মাস বেতন পান না। তারা অভিযোগের তীর শুড়েছেন ডিসি ফুডের উপর। ঐ সকল শ্রমিকরা বলেন, ইতিপূর্বে ঠিকাদারদের মাধ্যমে আমরা বেতন পেতাম কিন্তু জেলা ডিসি ফুড নিজেই দায়িত্ব নিয়ে আমাদের বেতন দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু আমরা দীর্ঘ আট মাস বেতন পাচ্ছি না। বর্তমানে আমরা অনাহারে-অর্ধাহারে দিন যাপন করছি।
হাজি লিয়াকত আলী নামে এক মিল মালিক জানান, করোণা কালীন সময়ে লোকসানের কারণে চাল দিতে পারেননি তারা। আবার কোটি টাকার ওপর জামানত আটকে আছে মিল মালিকদের। ডিসি ফুড অফিসের মাধ্যমে সরকারের উচিত টাকা ফেরত দেওয়া। অনেক মিল মালিকের ব্যাংকে লোন রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন মিল মালিক প্রতিবেদককে জানান, যে সকল মিল মালিকদের অর্থ ফেরত দেয়া হয়েছে, তাদের কাছ থেকে ডিসি ফুড নিয়েছে অনৈতিক সুবিধা।
মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন বলেন, কয়েক বছর ধরে মিল মালিকরা ফুড অফিসে চাল সরবরাহ করতে গিয়ে লোকসানের ঘানি টানতে হচ্ছে। তার ওপর করোনাকালীন সময়ের দুর্যোগ মুহূর্তের জামানত আটকে রাখা হয়েছে। এখন শুনছি এ অর্থ আর ফেরত দেওয়া হবে না। এতে সমস্যায় পড়বেন অনেক মিল মালিক।
জেলা খাদ্য কর্মকর্তা তাহসিনুল হক বলেন, যারা চাল দিতে পারেনি তাদের জামানত আর ফেরত দেওয়া হবে না। পুরোপুরি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশনা রয়েছে। মিল মালিকদের বিষয়টি নিয়ে নতুন কোনো নির্দেশনা নেই। তাই জামানতের অর্থ ফেরত দেওয়া হবে না।