কুষ্টিয়ায় উজানগ্রাম ইউপি নির্বাচনে বিএনপি নেতা সাবু এবারও নৌকার মাঝি হলেন
প্রতিবাদী কণ্ঠ ডেস্ক : আগামী ৫ জানুয়ারি ৫ম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার উজানগ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের পদপ্রার্থী বিএনপি নেতা সাবুবিন ইসলাম ওরফে সাবু আওয়ামীলীগ মনোনিত নৌকা মাঝি হয়ে নির্বাচন করছেন। ইতিমধ্যে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩(সদর) আসনের ধানের শীষের সাবেক সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দীনের সাথে চেয়ারম্যান প্রার্থী সাবুবিন ইসলাম সাবুর বিগত দিনের বিভিন্ন মিটিংয়ের ছবি এবং একই মঞ্চে বক্তব্য দেওয়ার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, সাবুবিন সাবু ১৯৯৩ সালে যখন প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয় তখন তিনি বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনিত হয়েছিলেন। বর্তমানে উজানগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সাবুবিন সাবু বিএনপির রাজনীতি করলেও আওয়ামীলীগ মনোনিত নৌকা প্রতিকের প্রার্থী হওয়ায় এলাকায় নৌকা প্রতিক বঞ্চিত আওয়ামী লীগ নেতা সহ সাধারণ কর্মীদের মধ্যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
দুর্বাচারা এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, রুয়েট শিক্ষার্থী মুক্তিযুদ্ধের সময় বিশেষ ভূমিকা রাখেন কুষ্টিয়া উজানগ্রাম ইউনিয়নের দূর্বাচারা গ্রামের মৃত ছলিম উদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে মৃত শহীদ শহীদুল ইসলাম। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক সেনাদের হাতে শহীদ হন। সেই সুবাদে বর্তমানে মৃত ছলিম উদ্দিন বিশ্বাসের পরিবার শহীদ পরিবার নামে উপাধি পান। মৃত ছলিম উদ্দিনের বিশ্বাসের দুইটি সংসার ছিলো প্রথম পক্ষে ছিলেন সাবুবিন সাবু এবং দ্বিতীয় পক্ষে ছিলেন শহীদ শহীদুল ইসলাম। শহীদ পরিবারের উপাধি পেয়েছেন দ্বিতীয় পক্ষের পরিবারের সদস্য। কিন্তু সাবুবিন সাবু প্রথম পক্ষের সন্তান হওয়ার পরেও সে নিজেকে শহীদ পরিবারের সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়ে সমাজে বিভিন্ন রকম ফায়দা লুটছে।
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগকে সু-সংগঠিত করার লক্ষ্যে ইউনিয়ন পর্যায়ে দেওয়া হচ্ছে নৌকা প্রতিক। নৌকাকে কিছু দলীয় বেঈমানের কারণে আজ কলংকিত করা হচ্ছে বলে দাবি জানিয়েছেন উজানগ্রাম ইউনিয়নবাসী। সাবুবিন ইসলাম সাবু নৌকা প্রতিক পেয়ে নির্বাচিত হলে এই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আর মূল্যায়িত হবে না বলে আংগুল তুলেছেন এলাকার জনগণ। নৌকার প্রার্থীর বিষয়ে কুষ্টিয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি ও সদর উপজেলার চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতার দৃষ্টি আকর্ষন করেছে উজানগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের তৃণমূল থেকে সকল নেতাকর্মীরা।
কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সোহরাব উদ্দিনের মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, সাবু আমার ভাগ্নে। আগে দলীয় প্রতিক ছিল না। তখন সে স্বতন্ত্র প্রার্থী দাঁড়িয়েছিল। আর যে ছবি ভাইরাল হয়েছে সেটা কোন অনুষ্ঠানের ছবি হবে হয়তো।
উজানগ্রাম ইউনিয়নের মনোনয়ন প্রত্যাহারকৃত চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রফেসর এম,এ আব্দুল মজিদ নৌকা প্রার্থী সাবু সম্পর্কে বলেন, এগুলো আমরা স্বচক্ষে দেখেছি। যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসে তখন সে সরকারের লোক হয়ে যায়। বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তিনি চন্টু সাহেবের সাথে ভোট করেছেন। সোহরাব সাহেবের সাথে ভোট করেছেন। আমরা নিজের চোখে দেখেছি কারন আমরা এই ইউনিয়নেরই মানুষ। বর্তমানেও আ’লীগের কোনো নেতাকর্মী বা সাধারণ লোকজনের সাথে তার কোন সম্পৃক্ততা নেই।
উজানগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি সানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, সে নৌকার মনোনীত প্রার্থী হয়ে আমরাই লজ্জিত। কুষ্টিয়ার সবাই জানে সাবুবিন ইসলাম সাবু বিএনপি দল করে। বিএনপির দলেও মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে তাই বলে বিএনপির লোককে মুক্তিযোদ্ধা বলে আওয়ামীলীগের মনোনিত নৌকা প্রতিক দেওয়া বিষয়টি কেমন হয়ে যায়। আমার চাচা সমসের মোল্লাও মুক্তিযোদ্ধা। আমরাও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। সাবুবিন ইসলাম সাবু বিএনপির নেতৃত্ব পর্যায় ব্যক্তি ছিলেন বিভিন্ন মিটিং মিছিলে তাকে দেখা গেছে। সে জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপি নেতা সোহরাব উদ্দিনের সাথে তার বিভিন্ন রাজনৈতিক সভায় উপস্থিত ও বক্তব্য দেওয়ার ছবি ভাইরাল হয়েছে।
উজানগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক বলেন, গত কয়েক দিন যাবত ফেসবুকে দেখছি উজানগ্রাম ইউনিয়ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতিকের চেয়ারম্যান প্রার্থী সাবুবিন ইসলাম সাবুর সাথে কুষ্টিয়া-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সোহরাব উদ্দিনের সাথে রাজনৈতিক সভায় উপস্থিত ও বক্তব্য রাখার ছবি ভাইরাল হয়েছে। তিনি বলেন, ২০১৬ সালে দল তাকে নৌকা প্রতিক দিয়েছিলো আমরা খুব কষ্ট করে করে তাকে জিতিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু উজানগ্রামবাসী মেনে নিতে চাইনি। কিন্তু এবারও দল তাকেই মনোনয়ন দিয়েছে। জনগন এবার তাকে ভোট দেওয়ার জন্য উৎসাহী নয়। নৌকা ঠিক আছে কিন্তু নৌকার মাঝি ঠিক হয়নি। জনগন মনে হচ্ছে উল্টো চিন্তা ভাবনা করার সম্ভাবনা আছে। তবুও দলের সিদ্ধান্তের বাইরে আমি যেতে পারছিনা। কারণ দল যাকে নৌকার মাঝি দিয়েছে তার পক্ষ নিয়ে আমাকে পুনরায় ভোটের মাঠে নামতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে নৌকা প্রতিকের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সাবুবিন ইসলাম সাবুর সাথে মুঠোফোনে মাধ্যমে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এইসব ভুয়া কথা। কে কি ফেসবুকে দিয়েছে তা আমার দেখার দরকার নেই। আর সবচেয়ে বড় কথা আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। এছাড়াও আমি থানা আওয়ামীলীগের একজন সদস্য।
সরোজমিনে উজানগ্রাম এলাকাবাসীর মুখ থেকে জানা গেছে, এবার আমরা আর ওই দুমুখো সাপের পিছনে দৌড়াবে না। কারণ যার মধ্যে কোন নীতি নাই সে কখনো আমাদের সুখ দুঃখের সাথী হতে পারেনা। যে কারণে আমরা এবার নির্বাচনে অন্য কোন প্রার্থীকে বেছে নিয়ে তাকে আমরা ভোট দিয়ে জয় যুক্ত করব। যদি নির্বাচনটি ফেয়ার ভাবে হয়। তারা এটাও বলেন আমাদের ইউনিয়নে যে একজন চেয়ারম্যান আছে তার নাম সাবুবিন ওরফে সাবু তাকে অনেকে চিনেন না।