প্রতিবাদী কন্ঠ ডেস্ক : ‘আমার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির প্রমাণ দিতে পারলে আমি চাকরী ছেড়ে দিব,’ গত জুন মাসের ২০ তারিখে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কুষ্টিয়া চৌড়হাস ভাদালিয়া হাইওয়ে থানার ওসি ইদ্রিস আলী এ কথাগুলো বলেন। চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জিরো টলারেন্স ঘোষণা করলেও তারপরেও থেমে নেই হাইওয়ে পুলিশের চাঁদাবাজি।
এরই মাঝে ক্যামেরায় ধরা পড়ে তাদের চাঁদাবাজির দৃশ্য । চাঁদাবাজির ভিডিওটি ধারণ করা হয় কুষ্টিয়া শহরের বাইপাস রোডে। প্রায় একমাস পূর্বে কুষ্টিয়া ত্রিমোহনী থেকে একটি ট্রাক বাইপাস সড়ক দিয়ে যাচ্ছিলেন খাজানগরের দিকে। উক্ত ট্রাকের মধ্যে হেলপার সেজে বসে পড়েন এক প্রতিবেদক। মাঝ পথে গিয়ে দেখে কুষ্টিয়া হাইওয়ে থানার ৫ সদস্যের একটি টিম কাগজ দেখার নাম করে রাস্তার দুই পাশে চলাচলকৃত প্রতিটা ট্রাক থামিয়ে প্রকারভেদে ১০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা তুলছেন। সংবাদকর্মীর ট্রাকটিও যথারীতি হাত মেরে থামিয়ে সরাসরি চাঁদা দাবি করলেন। তখন ট্রাক ড্রাইভার বললেন, এটি খাজানগরের গাড়ি তবুও উক্ত ফাঁড়ির সদস্য গাড়ির কোন কাগজ না দেখেই চাঁদা নিলেন।
চাঁদা নেওয়ার সময় ভিডিও করার চিত্রটি ঐ পুলিশ সদস্যের চোখে পড়ে গেলে গাড়ি থামিয়ে উঠে এসে মোবাইল ক্যামেরাটি কেড়ে নেওয়ার চেষ্টাকালে গলায় আইডি কার্ড ঝুলানো দেখে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে ওসি ইদ্রিস আলী প্রতিবেদককে ফোনে অনুরোধ করে বলেন, আমি এই মুহূর্তে বাইরে আছি। আপনি বিষয়টি নিয়ে এমন কিছু করবেন না যেন আমাদের সহকর্মীদের কোন ক্ষতি হয়। বর্তমানে এখনো ঐ পুলিশ সদস্য থানাতে কর্মরত আছেন।
চাঁদাবাজির ভিডিও ধারণ করার মাস খানেক পর গত ২০ জুন দুপুরে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের ভাদালিয়া হাইওয়ে পুলিশের থানার সামনে হাইওয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও অশালীন আচরণের অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ ও অবরোধ করেছিল ট্রাক, অটো, সিএনজি, মাইক্রোবাসের মালিক, ড্রাইভার ,শ্রমিক ও নেতাকর্মীরা।
উল্লেখ্য যে, ইতিপূর্বে উক্ত থানার বদলিকৃত ওসি জুলহাসের চাঁদাবাজির ভিডিও ফুটেজ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে উক্ত ভিডিও ফুটেজ ও সংবাদটি হাইওয়ে পুলিশের সদর দপ্তর সহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কাছে প্রেরণ করার পর তিনি বদলি হন। তিনি চলে যাওয়ার পর ২০২১ সালের ৪ নভেম্বরে উক্ত থানাতে অফিসার ইনচার্জ হিসাবে যোগদান করেন ইদ্রিস আলী। যোগদানের পর থেকেই তিনি চাঁদাবাজির মহা উৎসবে লিপ্ত হয়ে পড়েন। শুরু করেন নিত্য নতুন কৌশল।
উক্ত থানার গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, বর্তমান ইনচার্জ নিত্য নতুন কৌশল অবলম্বন করে চাঁদাবাজি করে যাচ্ছেন। তিনি এটাও বলেন, ট্রাক, মাইক্রোবাস থামিয়ে তো প্রতিদিন চাঁদা আদায় চলছেই। সেই সাথে প্রতিমাসে মিরপুর থেকে লাটা হাম্বা, নসিমন, করিমন চলাচল বাবদ আসে ৫০ হাজার টাকা, কুমারখালী থেকে আসে ৫০ হাজার টাকা, কুষ্টিয়া শহরের সিএনজি বাবদ আসে ৫০ হাজার টাকা, ভেড়ামারা থেকে আসে ৫০ হাজার টাকা। এছাড়াও কুষ্টিয়া সদরের ভাদালিয়া, লক্ষীপুর, ঝাউদিয়া, স্বস্তিপুর, চৌড়হাস, বিত্তিপাড়া, বালিয়াপাড়া, আলামপুর, পোড়াদহ, কাঞ্চনপুর, বংশীতলা, হরিনারায়ণপুর, বটতৈল, দূর্বাচারা সহ বিভিন্ন এলাকার ব্যাটারি চালিত অটো রিক্সা, নসিমন, করিমন, আলম সাধু লাটা হাম্বা সহ বিভিন্ন অবৈধ যানবাহনের নিকট থেকে মাসিক চুক্তি করে নিয়েছে। যে সকল অবৈধ যানবাহন গুলোর সাথে চুক্তি নেই, সেগুলো ধরেই মামলা দেওয়া হয় বাকিগুলো সাংকেতিক চিহ্ন দেখে ছেড়ে দেওয়া হয়।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, কুষ্টিয়া হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ ইদ্রিসের নেতৃত্বে টিম গঠনের মাধ্যমে প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে বাইপাস সড়কে, কুষ্টিয়া রাজবাড়ি আঞ্চলিক মহাসড়কে, আলামপুর ৮ মাইল ব্রিজের পাশে সহ বিভিন্ন জায়গায় টিম গঠনের মাধ্যমে চাঁদাবাজি করে যাচ্ছেন। কথায় আছে ‘চোরের সাত দিন, গৃহস্থের একদিন’, এই একদিন ধরা খেলো অনুসন্ধানী প্রতিবেদকের হাতে, তাও আবার সরাসরি চাঁদা নেওয়ার ভিডিও ফুটেজ।
এ বিষয়ে অফিসার ইনচার্জ ইদ্রিসের মুঠোফোনে চাঁদাবাজি করার ভিডিও ফুটোজের কথা হলে তিনি বলেন ভিডিওটি নিয়ে আমার অফিসে আসেন। অফিসে না যাওয়ার কারণে তিনি বিভিন্ন কর্নার থেকে প্রতিবেদককে নিউজ না করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বেশ কয়েকদিন ধরে।
অন্যদিকে মাদারীপুর রিজিওনাল হাইওয়ে পুলিশের পুলিশ সুপারের মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নাই।
চাঁদাবাজির বিষয়টি নিয়ে প্রতিটা ট্রাক মালিক ড্রাইভার হেলপার অটো, নসিমন করিমন আলমসাধুর চালকসহ এলাকাবাসী সবাই অফিসার ইনচার্জ ইদ্রিস আলীর উপর ক্ষুব্ধ। তারা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন, এই অফিসার ইনচার্জের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন জানান।