এজাজ উচ্ছ্বাস : চার খুনে বিষাদে রূপ নিয়েছে ঈদ আনন্দ। থেমে গেছে সব কোলাহল। স্তব্দ হয়ে গেছে গ্রামের ঈদ আনন্দ। গ্রামজুড়ে কান্না আর আহাজারি। শোকে বিহ্বল স্বজনরাও। বাবা ও সন্তান হারিয়ে পাগল প্রায় সন্তানরাও। শোকে ছায়া নেমে এসেছে পুরো গ্রামজুড়ে। এমন চিত্র এখন কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার ঝাউদিয়া ইউনিয়নের আস্তানগর গ্রামে। গত সোমবার বিকেলে গ্রামটিতে পূর্ব শত্রুতার জেরে স্থানীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিবদমান দ্বন্দে আওয়ামীলীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় চারজন নিহত এবং ১০জন আহত হন।
নিহতরা হলেন-স্থানীয় আস্তানগর গ্রামের বাসিন্দা মৃত: আজিজুল হকের ছেলে মতিয়ার রহমান (৪৫), দাউদ মন্ডলের ছেলে লাল্টু মন্ডল(৪২), মৃত: হোসেন মন্ডলের ছেলে আবুল কাশেম(৬৫) এবং মৃত: আবুল মালিথার ছেলে আব্দুর রহিম মালিথা (৭০)। প্রথম তিনজন বর্তমান ঝাউদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা মেহেদী হাসানের সমর্থক এবং আব্দুর রহিম মালিথা প্রতিপক্ষ সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি কেরামত আলীর সমর্থক। এঘটনায় নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে নিজ গ্রামে ভয়-আতঙ্কের মধ্যে দিয়ে মঙ্গলবার (০৩ মে) বিকেল ৪টার দিকে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। চার খুনে এখন পর্যন্ত থানায় হয়নি মামলা। এঘটনায় কাউকেই আটক করেনি পুলিশ। নিরানন্দের ঈদে পুরুষ শুন্য গ্রাম। আহতরা এখনও কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার অফিসার ইনচার্জ মোস্তাফিজুর রহমান রতন জানান,স্থানীয় আধিপত্য বিস্তার ও জমিজমা সংক্রান্ত দ্বন্দের জেরে কেরামত আলীর সমর্থক ও মেহেদী হাসান সমর্থকদের মধ্যে পূর্ব থেকেই উত্তেজনা চলছিল। সোমবার বিকেলে দুই পক্ষের সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে কয়েক রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কেউই অভিযোগ নিয়ে আসেনি। অভিযোগ পেলেই তদন্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সংঘাত এড়াতে আমি নিজে সহ ওই এলাকায় এখন অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে নিজ গ্রামেই আজ বিকেল ৪টার দিকে দাফন কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মেহেদী হাসানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কেরামত আলীর জানান,রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই আমার বডিগার্ড রফিকুলের পিতা রহিম মালিথাকে হত্যা করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।
উল্লেখ্য, সোমবার (০২ মে) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঝাউদিয়া ইউনিয়নের আস্তানগর বাজারে কেরামত আলীর সমর্থক আব্দুর রহিম মালিথার সাথে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে মেহেদী হাসানের সমর্থকরা রহিমের উপর ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায়। এসময় লঠির আঘাতে রহিম মাটিতে পরে যায়। পরিস্থিতি বেগতি দেখে মেহেদী সমর্থকরা স্থান ত্যাগ করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালায়। রহিমকে মারধরের খবর পেয়ে কেরামত আলীর সমর্থকরা পাল্টা মেহেদী সমর্থকদের উপর হামলা চালালে দু’পক্ষের সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে মেহিদীর সমর্থকরা পালিয়ে যায় এই সুযোগে কেরামত আলী সমর্থকরা উপর্যুপরি হামলা চালিয়ে লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মেহেদী সমর্থক মতিয়ার, লাল্টু ও আবুল কাশেমের উপর হামলা চালিয়ে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে। পরে সংবাদ পেয়ে ইবি থানা পুলিশ আহতদের উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ৪জনকে মৃত ঘোষনা করেন। এছাড়া হাসপাতালে ভর্তি আহত ১০জনের মধ্যে আরও দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।