কুমারখালির অটিস্টিক বিদ্যালয়ের সভাপতির লঙ্কাকান্ড.
কথায় আছে লেখাপড়া করে যে গাড়ি ঘোড়া চরে সে। এবার সেই প্রবাদকেই মিথ্যা করে দিয়ে সুকৌশলে স্কুলে চাকরি দেওয়ার নামে লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন স্কুলের গন্ডি পার হতে না পারা এক যুবক রাকিবুল ইসলাম। নিয়মে না থাকলেও তিনি করে দেখিয়েছেন। যার কাছে যেমন পেরেছেন নিয়েছেন মোটা অংকের টাকা। সবই নিয়োগ বানিজ্য করে। একই বিদ্যালয়ে তিনজনকে প্রধান শিক্ষক হিসেবেও নিয়োগ দিয়েছেন এই যুবক। তবে তিনজনের কেউই জানেন না আসল প্রধান শিক্ষককে। বলছিলাম কুষ্টিয়ার কুমারখালি উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের মহেন্দ্রপুর বর্ণমালা প্রতিবন্ধী অটিস্টিক বিদ্যালয়ের সভাপতি রাকিবুল ইসলামের কথা।
রাজমিস্ত্রী বাবার সন্তান রাকিবুল ইসলাম ২২বছর বয়সেই এখন সে কোটি টাকার মালিক। তবে সবই হয়েছে বর্ণমালা প্রতিবন্ধী অটিস্টিক বিদ্যালয়টিকে সামনে রেখে। বিদেশি দাতা সংস্থার প্রতিনিধিদের নানান ভাবে আকৃষ্ট করে বর্ণমালা প্রতিবন্ধী অটিস্টিক বিদ্যালয়ের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ও বিদ্যালয়ের নানান অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য পরিদর্শনে নিয়ে এসেও প্রতারণার নানান কৌশল ব্যবহার করে হাতিয়ে নিয়েছেন লক্ষ লক্ষ টাকা।
সেই টাকায় প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ও বিদ্যালয়ের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই ভাগ্য উন্নয়ন হয়েছে স্কুলের গন্ডি পার হতে না পারা যুবক বিদ্যালয়টির সভাপতি রাকিবুল ইসলামের। কুমারখালি শহরে ইউসিবি এজেন্ট ব্যাংক, স্যামসাং এর শোরুম, নিজের নামে জায়গা জমি না থেকেও হাতিয়ে নিয়েছেন বর্ণমালা অটো বিক্স ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের লাইসেন্স। মানুষের বিশ্বাস অর্জনের জন্য যুবক রাকিবুলের এলাকায় রাজকীয় চলাফেরা।
সুবিধামতো সুযোগ বুঝে গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তা সাথে, কখনো আবার সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে আবার কখনো ব্যবসায়ী সহ প্রভাবশালীদের সঙ্গে ছবি তুলে সেই ছবি নানা কৌশলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে নিজের ক্ষমতা জানান দেন এই যুবক। এভাবেই প্রতারণার নানান কৌশল ব্যবহার করেছেন সে। শুধু তাই নয়, বিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকার শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগও রয়েছে স্কুলের সভাপতি রাকিবুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
যুবক রাকিবুল ইসলামের সরল চেহারার আড়ালে প্রতারণার নানান কৌশল ব্যবহার করায় হতবাক কুমারখালি উপজেলারবাসী। সঠিক তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
এদিকে এ সংক্রান্ত কয়েকটি অভিযোগপত্র কুমারখালি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর দায়ের করেছেন ভুক্তভোগীরা। ভুক্তভোগীরা হলেন-মহেন্দ্রপুর গ্রামের তানভীর আহম্মেদ লিটন, ওবাইদুল্লাহ মুন্সী ও ঈমান আলী। তাদের তিনজনকেই একই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন রাকিবুল ইসলাম।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী তানভির আহম্মেদ লিটন বলেন, প্রধান শিক্ষক হিসেবে আমাকে নিয়োগ দেয়ার জন্য ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা গ্রহণ করে বিদ্যালয়ের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম। পরবর্তীতে আমাকে নিয়োগপত্রও দিয়েছে সে, যা আমার কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ইমান হোসেন বলেন, আমি উক্ত বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের জন্য সভাপতি রাকিবুল ইসলামের নিকট ২ লাখ টাকা নিয়েছে। সে আমাকে নিয়োগপত্রও দিয়েছে। পরবর্তীতে আমাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়ার কারনে আমি ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে উক্ত বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষিকা বলেন, উক্ত স্কুলের সভাপতি কর্তৃক আমার শ্লীলতাহানির চেষ্টা করা হয়েছিল। আমি বিষয়টি ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।
এ ব্যাপারে রাকিবুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তার মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে জগন্নাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ খান বলেন, রাকিবুল ইসলামের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ শুনেছি। সে এলাকায় এমন কাজই করে বেড়ায়। ছেলেটি একটু চালাক প্রকৃতির। এর আগেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছিলাম।
কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিতান কুমার মন্ডল বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।