প্রতিবাদী কন্ঠ ডেস্ক ॥
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামের আরো একটি ফোনালাপের অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ‘মিসেস সালাম’ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে এ অডিও ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে উপাচার্যের ৬টি অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলো। শেষের অডিওতে উপাচার্যকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগ ও ফাইন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের নিয়োগ প্রার্থী সম্পর্কে কথা বলতে শোনা যায়।
এদিকে, অডিও ভাইরালের পরপরই অনিবার্য কারণ দেখিয়ে তিনটি নিয়োগ বোর্ড স্থগিত করা হয়। রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অনিবার্য কারণে আগামী ২০ ও ২২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় মেডিকেল অফিসার পদের, শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক পদের এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক পদের নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ড স্থগিত করা হয়েছে। এর আগে, বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে ‘ফারাহ জেবিন’ আইডি থেকে পরপর ৩টি অডিও ভাইরাল হয়। অডিওতে উপাচার্যের সাথে অলি নামের একজন চাকরি প্রার্থীর নিয়োগ বোর্ডের প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে আলাপ হয়। এছাড়াও পরবর্তী পরীক্ষার প্রশ্ন সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়। অডিওতে ওই প্রার্থীকে আগামী নিয়োগ বোর্ডে টাকা দিয়ে আবেদন করানোর জন্য তিনজন প্রার্থীকে যোগাড় করতে বলা হয়।
শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় ‘মিসেস সালাম’ নামের ফেসবুক আইডি থেকে উপাচার্যের দুইটি ভিডিও ভাইরাল হয়। যেখানে তিনি বলেন, এখানে টাকা পয়সা ছাড়া শুধু মেধায় নিয়োগ হয় এটা স্বপ্নের বাইরে। একেক জনের কাছে ১৬/১৮ লাখ করে টাকা নেয়। টিচার নেয়, ছাত্র নেয়, কর্মকর্তা নেয়, যারা এখানে কন্টাকের কাজ করে তারা টাকা নেয়, এবার নাকি তারা ফেল করেছে।
এ ঘটনায় উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি, শাপলা ফোরাম ও শাখা ছাত্রলীগের সাথে পৃথক পৃথক বৈঠক করেন। সেখানে তিনি নিজের অবস্থান পরিষ্কার করার চেষ্টা করেন। বৈঠকে তিনি অডিও গুলোর কন্ঠস্বর নিজের বলে স্বীকার করলেও ভিন্ন প্রেক্ষাপটে এসব কথা বলেছেন বলে দাবি করেন তিনি। এছাড়াও তিনি সকলকে এ বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখার আহবান জানান।
অন্যদিকে অডিও ফাঁসের ঘটনায় ইবি ভিসির পদত্যাগের দাবিতে কার্যালয়ে তালা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মীদের একটি গ্রুপ। রবিবার সকাল ১০টার দিকে ছাত্রলীগের সাবেক ত্রিশজন নেতা-কর্মী প্রশাসন ভবনে গিয়ে ইবি উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আবদুস সালামের কার্যালয়ের ক্যাসি গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন। ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের একজন চাকরিপ্রার্থীর মধ্যে ৬টি অডিও কথোপকথন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ায় তারা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের ব্যানারে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন বলে জানান আন্দোলন কারীরা। উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি না মানা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে তাদের বিক্ষোভ অব্যাহত থাকবে বলে জানান তারা।
ইবি ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল জোয়ার্দার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে উপাচার্য অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেছেন। সেই সাথে ছাত্রলীগকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন বলে তার ফাঁস হওয়া এক অডিও ক্লিপে উল্লেখ করেছেন। সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি খতিয়ে দেখার আহ্বান জানান তিনি।
এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. তপন কুমার জেদ্দার বলেন, উপাচার্যের সাথে আমাদের বৈঠক হয়েছে। তিনি আমাদের বলেছেন এসব আমার ব্যক্তিগত আলাপচারিতা। ইনফরমালি এসব বলেছি। আমরা উপাচার্যকে বলেছি, আপনার ব্যক্তিগত তথ্য হেফাজত করার দায়িত্ব আপনার। আপনার এই কথপোকথনে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। আপনি মিডিয়ার সামনে আপনার অবস্থান পরিষ্কার করবেন। এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামকে সাংবাদিক পরিচয়ে ফোন দিলে তিনি লাইন কেটে দেন।